জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম নানা বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত মশক নিধন, রাজস্ব আদায় ও জলাবদ্ধতা ইস্যুতে তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর এই অসন্তোষ কতটুকু কাজ দেবে তা না জানলেও নগরবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে চায় অচিরেই। নগরবাসী মনে করেন, মন্ত্রী যদি এভাবে মাঝে মাঝে কাজের অগ্রগতির নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, তাহলে কাজে গাফেলতি ঘটবে না।

গত ১৫ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এখন যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটা দিয়ে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন হবে? সেটা নিয়ে আপনাদের সংশয় আছে, আমার নিজেরও আছে। এটা ছাড়াও তো আরো অনেক কারণ আছে। এটা নিয়ে আপনাদের কোনো স্টাডি আছে? আপনারা তো ওয়াসাকে ডেকে নিয়ে বসতে পারেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ ঠিকভাবে না হলে কষ্ট পাই। কাজের মান গুণগত না হলে, মানুষের কল্যাণে না হলে কষ্ট পাব। মানুষের জন্য আমাদের করার অনেক কিছু আছে। কিন্তু যথাযথ সেবা দেওয়া হবে না। নালা করব, কিন্তু সেটা টেকসই হবে না, মানুষের কাজে আসবে না। তাই জনগণের জন্য কাজ করার সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, যাতে টেকসই হয়। তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এত টাকা ব্যয় করার পরেও কেন জলাবদ্ধতা হবে? এটা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। বারবার দগ্ধ হই। কী কাজ হচ্ছে তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং করলাম, রেজুলেশন করলাম; এগুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত। জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো স্টাডি বা সমীক্ষা আছে কি আপনাদের?

তিনি বলেন, ঢাকার দুই মেয়র নিজেরাই অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ করেছে জলাবদ্ধতা নিয়ে। অনেকগুলো খাল খনন করেছে। এখন আর সাত আট দিন পানি জমে থাকে না। দুইতিন ঘণ্টা পর নেমে যায়। দুই মেয়রকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে দুই মেয়র কাজ করেছেন। এ সময় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জলাবদ্ধতার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়নের কথা বলেন। তখন মন্ত্রী বলেন, এটা ঢাকায়ও আছে। সারা পৃথিবীতে প্রথম নগরায়ন এভাবে হয়েছে। পরিকল্পনা হয়েছে পরে।

জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রামবাসী চরম হতাশ। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০১৭ সাল থেকেই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০২৩ সালে এসেও এর সুফল জনগণ সরাসরি পাচ্ছে না। আজও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয় চট্টগ্রাম। ব্যবসাবাণিজ্য, নাগরিক জীবনসব স্থবির হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান তাঁর এক লেখায় বলেছেন, বস্তুত ১৯৯৫ সালেই চট্টগ্রাম নগরীর জন্য সুনির্দিষ্টভাবে ‘ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান’ করা হয়েছিল। সেখানে নতুন চারটি খাল খননের কথা বলা হয়েছিল। তার মধ্যে একটিমাত্র খালের কাজ ২০১৪ সালে শুরু হলেও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। আরেকটি বড় বিষয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে ড্রেনেজ প্রকল্প তৈরি করা হয়, সেখানে সাধারণত প্রাইমারি ড্রেন, সেকেন্ডারি ড্রেন ও টারশিয়ারি ড্রেন অর্থাৎ প্রথম পর্যায়, দ্বিতীয় পর্যায় ও তৃতীয় পর্যায়ের ড্রেনের কথা বলা থাকে। কিন্তু সরকার যে প্রকল্পগুলো নিয়েছে তাতে বড় বড় ড্রেনের সংস্কার কাজ চললেও প্রাথমিক সংযোগগুলো এর মধ্যে নেই। ফলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পানিপ্রবাহ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে; বড় খাল বা ড্রেন পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। প্রকল্প পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা বড় ধরনের দুর্বলতা। আরেকটি বিষয় হলো, চট্টগ্রাম নগরীতে যে ২২টি সেবাদানকারী সংস্থা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। সংস্থাগুলো ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত হওয়ায় তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে পরিচালিত হয়। ফলে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে স্বপ্ন দেখেছিলেনএক ছাতার নিচে নগর শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে; তা সম্ভব হয়নি। আজও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রশাসনিক দূরত্ব রয়েই গেছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সুফল না মেলার ক্ষেত্রে বরাবরই এক সংস্থা আরেকটির দিকে আঙুল তুলে থাকে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে নদীর নাব্য বৃদ্ধি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে কর্ণফুলীতে কার্যকর ক্যাপিটাল ড্রেজিং নিশ্চিত করতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গুরুত্ব ও বরাদ্দ দিয়েছেন, তার সর্বোচ্চ ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধনেরও বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে