দরপত্র আহ্বানের এক বছর পর নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি খাল পুনরুদ্ধার প্রকল্প প্রণয়নে কনসালটেন্ট চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ইতোপূর্বে প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত চার প্রতিষ্ঠান থেকে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত করা হবে একটি ফার্ম। নিয়োগকৃত কনসালটেন্ট ফার্ম খাল পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়ন করবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান–২০১৬ অনুসারে নগরে খাল আছে ৫৭টি। এর মধ্যে সিডিএ ৩৬ খাল নিয়ে বাস্তবায়ন করছে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। ওই প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পরও অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায় নগর। এক্ষেত্রে প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১ খাল ভরাট থাকা নিয়ে অনেক সময় দোষারোপ করা হয় চসিককে। এ অবস্থায় খালগুলো উদ্ধারে চসিক উদ্যোগ নেয়। সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি নিয়েও প্রকল্প নেয়া হলে শহরের শতভাগ খাল পুনরুদ্ধার ও খননের আওতায় আসবে। যা ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সুফল আনবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচিত কনসালটেন্ট ফার্ম নতুন করে জরিপ করে খাল শনাক্ত করবে। আরএস–বিএস শীটের আলোকে খালের সীমানা নির্ধারণ করবে। খালের উপর থাকা অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করার পাশাপাশি এর পরিমাণও নির্ণয় করবে। খালের পাড়ে রাস্তা নির্মাণে কি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে এবং এর মূল্য নির্ধারণ করবে। খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে প্রাথমিক নকশা এবং এর ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুত করবে। পানির প্রবাহ, ঝড় এবং অন্যান্য আবহাওয়া সংক্রান্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতাও যাচাই করবে প্রতিষ্ঠানটি।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২১টি খালের ডিপিপি প্রণয়নের লক্ষ্যে কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগে ২০২২ সালেল ২৩ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। এতে ১০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। ওই চারটি থেকে আগামী সপ্তাহে একটি চূড়ান্ত করা হবে। ইতোপূর্বে প্রাথমিকভাবে চার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিইজিআইএস, ইনফ্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি, ওয়াশো ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রফেশনাল এসোসিয়েটস লিমিটেড জেবি আইডব্লিউএম।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আগামী সপ্তাহে আমরা সভা করব। সেখানে একটি ফার্মকে চূড়ান্ত করা হবে। প্রাইমারি ডিপিপি করতে যে তথ্য–উপাত্তের প্রয়োজন তার সবটুকুই জানাবে কনসালটেন্ট ফার্ম। চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুল হুদা আজাদীকে বলেন, খালগুলো কোথায় আছে, এগুলোর গভীরতা কেমন হবে তাসহ যাবতীয় তথ্য জানাবে কনসালটেন্ট ফার্ম।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান–২০১৬ অনুসারে নগরে খাল আছে ৫৭ টি। খালগুলোর দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। ওই মাস্টার প্লানের ভিত্তি করে জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত সিডিএ’র চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হচ্ছে ৩৬ খালের। যার দৈর্ঘ্য ৯৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ ৬৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ২১টি খাল প্রকল্পের বাইরে রয়ে গেছে। তাছাড়া মাস্টার প্ল্যানে নগরের ৫৭ খাল থেকে ১৪ লক্ষ ঘন মিটার কাদা ও মাটি উত্তোলনের প্রস্তাবনা রয়েছে। বিপরীতে সিডিএ’র গৃহীত প্রকল্পে ৯ লক্ষ ৪৮ হাজার ২১৪ ঘন মিটার কাদা ও মাটি উত্তোলনের প্রস্তাবনা আছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় সিডিএ’র মেগা প্রকল্পে মাটি উত্তোলনের পরিমাণ কম থাকায় প্রশ্ন উঠে মেগা প্রকল্পের সুফল নিয়ে এবং প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ২১ খাল নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নের।
ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান–২০১৬ বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১ খাল হচ্ছে– চট্টেশ্বরী খাল, ১৫ নং ঘাট এয়ারর্পোট খাল, রামপুর খাল, বালুখালী খাল, কৃষ্ণখালী খাল, কুয়াইশ খাল, ফরেস্ট খাল, উত্তর সলিমপুরের বারিঙ্গাছাড়া খাল এবং ভাটিয়ারির ধামাইর খাল। এছাড়া নেভাল একাডেমি, চরপাড়া, হোসাইন আহমেদ পাড়া, সিইপিজেড আনন্দবাজার, সিইপিজেড নতুন পাড়া, উত্তর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, লতিপফুর এবং সলিমপুরের স্লুইস গেইটের ১১টি সংযুক্ত খালও রয়েছে।
সিডিএ’র মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খাল হচ্ছে– রাজাখালী খাল ১, ২ ও ৩, চাক্তাই খাল, বির্জা খাল, হিজরা খাল, জামালখান খাল, বদরখালী খাল, চাক্তাই ডাইভারশন খাল, নোয়া খাল, মির্জা খাল, ডোমখালী খাল, বামনশাহী খাল, ত্রিপুরা খাল, উত্তরা খাল, শীতলঝর্ণা খাল, মহেশখাল, নাসির খাল, পাকিজা খাল, আজববাহার খাল, নয়ারহাট খাল, গয়নাছড়া খাল ১ ও ২, মহেশখালী খাল, মরিয়মবিবি খাল, বাকলিয়া খাল, সদরঘাট খাল ১ ও ২, খন্দকিয়া খাল, গুপ্ত খাল, রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি খাল, নয়ারহাট খাল, টেকপাড়া খাল, মোগলটুলী খাল, কলাবাগিচা খাল ও ফিরিঙ্গি বাজার খাল।












