জলাবদ্ধতার সমস্যা ক্রমান্বয়ে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে

| সোমবার , ২ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

টানা বৃষ্টি হলে নগরবাসী সবসময় আতংকে দিন অতিবাহিত করতো। সৃষ্টি হতো চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা। ফলে নগরীতে দেখা যেতো বেহাল দশা, বিপর্যস্ত হয়ে উঠতো জনজীবন। সামান্য বৃষ্টিতেই বছরের অনেক সময় এখানে এ সমস্যা দেখা যায়। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি না থাকলেও পানি জমে থাকতো প্রায় ১০১২ ঘণ্টা। এ সময় নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতো। তাছাড়া বৃষ্টির দিন এলেই এখানে রাস্তা ও নালা আলাদা করা যায় না। এসব নালা হয়ে ওঠে একেকটা মৃত্যুফাঁদ। কিন্তু কয়েকদিন ধরে নগরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আজাদী পত্রিকা সংবাদ ছাপলো : ‘ভারী বৃষ্টিতেও ডোবেনি নগর, স্বস্তি’। এতে বলা হয়েছে, নগরীতে গত বৃহস্পতিবার রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতেও কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। সচরাচর আগের বছরগুলোতে এমন বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যেত। এবার ভারি বৃষ্টিতেও কোথাও পানি না উঠায় নগরবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এতে আরো বলা হয়েছে, এবার ভারী বৃষ্টিতেও নগরীর মুরাদপুর, ২ নং গেট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, কাপাসগোলা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, পাথরঘাটা, ডিসি রোড, বাকলিয়া, ফুলতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। অথচ গত কয়েক বছর ধরে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিবন্দী থাকতো নিচু এলাকার মানুষ। এ বছর সেই চিত্র দেখা যায়নি। ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা না হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নালানর্দমা পরিষ্কারের তৎপরতার কারণে পানিপ্রবাহ নির্বিঘ্ন ছিল। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে প্রথম পাঁচ মাসে এখন পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত আটটি সভা হয়েছে। এসব সভায় নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ শেষ করতে মে মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সেবা সংস্থাগুলো।

আসলে জলাবদ্ধতা না হওয়ায় নগরবাসীর মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। চলতি মৌসুমে নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা অর্ধেকে এবং ক্রমান্বয়ে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তিনি চট্টগ্রামকে এই কাজে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা এবার বর্ষায় জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে নগরবাসী কতটা মুক্তি পাবেন সেটা জানতে চেয়েছিলেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, এ বছর যেহেতু বর্ষা মৌসুম ইতোমধ্যে এসে গেছে তাই এবার সমস্যা পুরোপুরি সমাধান সম্ভব হবে না। কিন্তু গত কয়েক মাসে সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাতে যদি এবছর আশানুরূপ ফল না আসে তাহলে তো সব কিছু মনে হবে জলে গেল। সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নানা উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক রকম থিওরিটিক্যাল আলোচনা করেছি, সেসব আর করতে চাই না, আমরা চাই জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে চিরতরে বের হয়ে আসতে। কিন্তু সেটা একবারেই হবে না, তাই আমাদেরকে ক্রমান্বয়ে অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টির পরও নগরে জলাবদ্ধতা না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক। তিনি মনে করেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ (চসিক) অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণেই এ সাফল্য এসেছে।

জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ নিয়ে যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা সত্যিকার অর্থে প্রশংসার দাবিদার। স্বল্প মেয়াদের মধ্যে যে সংস্কার কাজগুলো চলছে সেই কাজগুলোকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে হবে। তাহলে জলাবদ্ধতা থেকে চিরতরে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে