জলাবদ্ধতার যত কারণ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে কর্ণফুলী থানার সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় ১০ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র আটক করে পুলিশ। জব্দ তালিকায় ছিল জাহাজ থেকে ঘাটে অস্ত্র নিয়ে আসা দুটি কাঠের ট্রলারও। পরবর্তীতে ট্রলার দুটি রাখা হয় সদরঘাট খালে। সে ট্রলার দুটির একটি এখনো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ট্রলারটি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে একই জায়গায় পড়ে থাকায় একদিকে কমেছে খালের প্রশস্ততা। অন্যদিকে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। ফলে খালটির উপর নির্ভরশীল সদরঘাট, আগ্রাবাদসহ আশেপাশের এলাকায় অল্পবৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

নগরের জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য জানতে পারেন। কমিটির সদস্যরা ট্রলারটি সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করে।

একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার পরও নগরে জলাবদ্ধতার প্রকোপ না কমায় গত বুধবার বৈঠকে বসে চসিক ও সিডিএ। এতে জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজতে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সদস্যরা হচ্ছেন চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ আলী।

কমিটির সদস্যরা গত ২৫ ও ২৬ জুন হালিশহর, আগ্রাবাদ ও বাকলিয়া এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ওসব এলাকার জলাবদ্ধতার কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন। কারণগুলোর সমাধানে প্রাথমিক সুপারিশও প্রস্তুত করেন। আগামী মাসে কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। তবে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে চিহ্নিত কারণগুলো জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির সদস্য চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, হালিশহর জোন এবং বাকলিয়া জোন পরিদর্শন করেছি। সেখানে অনেকগুলো সমস্যা আমরা চিহ্নিত করেছি। সমাস্যাগুলোর সমাধানেরও সুপারিশ করেছি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, সুপারিশের কিছু অংশ সিটি কর্পোরেশন এবং বাকিগুলো সিডিএ বাস্তবায়ন করবে।

কমিটির সদস্য চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক আজাদীকে বলেন, শিগগিরই আমরা রির্পোট জমা দিয়ে দেব।

হালিশহর জোনে জলাবদ্ধতার কারণ :
সদরঘাট, আগ্রাবাদ, কাট্টলী, হালিশহরসহ আশেপাশের এলাকাগুলো হালিশহর জোনের অর্ন্তভুক্ত। এ জোনের সদরঘাট কালী বাড়ি মেনন হাসপাতালের পেছনে খালে ওয়াসা ও গ্যাসের পাইপ লাইন আছে। এতে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে। এছাড়া সেখানে একটি নালার উপর সিটি কর্পোরেশনের একটি ডাস্টবিনও আছে। যেটার তলা ভাঙা। ফলে ময়লাগুলো সব নালায় গিয়ে পড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে এটা চসিককে মেরামত করার সুপারিশ করেছে কমিটি। এছাড়া সেখানে নালার মুখে থাকা বাঁধের বস্তা অপসারণে ব্যবস্থা নেবে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

কাট্টলী এলাকার গয়নাছড়া খাল মহেশখালী খালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাহাড়তলী হয়ে শেষ হয়েছে ফয়’স লেকে। এ খালে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। খালটির মাঝখানে ও পাশে বর্তমানে সীট ফাইল করা আছে। এছাড়া খালের মাঝখানে মাটি রয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ উদ্যোগে মাটি সরিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার সুপারিশ করে কমিটি।

উত্তর আগ্রাবাদ ১০ নম্বর রোডে নালার উপর দেয়াল ভেঙে পড়েছে। ড্রেনের উপর থাকা দেয়ালটির মালিক পিডিবি। তাদেরকে দেয়ালটি সরানোর সুপারিশ করা হয়।

দক্ষিণ আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এলাকার পানি প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ মহেশখাল। এটার শাখা রামপুরা খাল। এ খালটির শ্যামলি ব্রিজ থেকে রমনা আবাসিক পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এখানে খালের মাঝখানে রাস্তা তৈরি করে কাজ করা হচ্ছে। পূর্ব পাশে এবং খালের মাঝখানে সীট ফাইল করা হয়েছে। রাস্তার জন্য খালের প্রশস্ততা কমেছে।

আগ্রাবাদের নাছির খালের ঠাণ্ডা মিয়া ব্রিজের উত্তর পাশে এখনো বাঁধ আছে। সেখানে বিকল্প না থাকায় বাঁধ খোলারও সুযোগ নেই। তাই সেখানে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে সুপারিশ করেছে কমিটি। এখানে দক্ষিণ অংশে খাল খনন করতে হবে বলেও মনে করেন কমিটির সদস্যরা।

বাকলিয়া জোনে জলাবদ্ধতার কারণ :
পূর্ব বাকলিয়ার ওয়াইজের পাড়া মসজিদের বিপরীতে কৃষি খালের জায়গা দখল চারটি স্থানে করে চারটি পাকা ও আধা পাকা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্থাপনা চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দ্রুত উচ্ছেদের সুপারিশ করা হয়।

পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ রাজখালী খাল। খালটির দুটি শাখা খাল তথা কৃষি খাল-১ ও কৃষি খাল-২ ভরাট হয়ে আছে। এতে নাব্যতা সংকট হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে চসিকের ১০০ শ্রমিক দিয়ে আর্বজনা অপসারণের কথা।

চাক্তাই ডাইভারশন খালের তক্তার পোল এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য দেওয়া খুঁটি অপসারণ করা হয়নি। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহ। এর প্রভাবে পৃথক পাঁচটি ওয়ার্ড তথা পূর্ব ষোলশহর, শুলকবহর, চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া ও পূর্ব বাকলিয়ার পানি প্রবাহ কমে গেছে। খুঁটি অপসারণ ও নাব্যতা বৃদ্ধির কাজ করতে হবে চসিককে।

এছাড়া চন্দনপুরায় নির্মাণাধীন বাকলিয়া এক্সেস রোডের জন্য চাক্তাই খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচ থেকে মাটি অপসারণ করার সুপারিশ করা হয়। এটা বাস্তবায়ন করতে হবে সিডিএকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাজ্যকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব মোমেনের
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো : তথ্যমন্ত্রী