জলাতঙ্ক রোগের জন্য র্যাবিস ভাইরাস বহনকারী প্রাণী দায়ী। আমাদের দেশে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ জলাতঙ্ক রোগ কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের কারণে। বাকি ২ থেকে ৩ শতাংশ জলাতঙ্ক রোগ হয় বিড়াল, শিয়াল কিংবা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে। সাধারণত জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ৯ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। এছাড়া জীবনের যে কোনো সময়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তাই কেউ যদি মনে করেন–৩ মাস বা ৯০ দিন হয়ে গেছে, আর জলাতঙ্ক হবে না, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে সতেচনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক বা র্যাবিস দিবস পালিত হয়ে আসছে। গত ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১২টি দেশে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসটি পালন হয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলাতঙ্ক রোগ হলে মৃত্যু অবধারিত। তবে সময় মতো টিকা নিলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কুকুর কিংবা বন্যপ্রাণীর আঁচড় ও আছড় লাগলে অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জলাতঙ্ক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, এর প্রতিরোধের উপায়, পশুকে টিকা দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করার জন্য সঠিক তথ্য অপরিহার্য। তথ্য ছাড়া এ রোগের গুরুতর প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যাবে না। সে ক্ষেত্রে অন্যকেও সচেতন করা সম্ভব হবে না। প্রতি বছর সারা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ ও প্রাণী জলাতঙ্কে মারা যাচ্ছে। তাই সঠিক তথ্য ব্যবহার করে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নাই। বিশেষ করে কুকুর বা বিড়াল ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়া যারা ঘরে কুকুর–বিড়াল লালন পালন করে ওইসব ক্ষেত্রে নিয়মিত টিকা দিতে হবে। অন্যদিকে কেউ যদি প্রাণী দ্বারা কামড় বা আচড়ে আক্রান্ত হন, তবে দ্রুত আক্রান্ত স্থানে ১৫ মিনিট ধরে সাবান পানি ধুতে হবে। এতে ৮০ শতাংশ জলাতঙ্কের ভাইরাস মরে যায়। পরবর্তীতে দ্রুত কোনো ধরনের পল্লী চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার আক্রান্তের ধরন অনুযায়ী ক্যাটাগরি করে চিকিৎসা শুরু করবেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মডার্ন টিকার পদ্ধতি চালু করেছেন। এটিতে তিনটি ডোজ নিয়ে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে পূর্ণ ডোজ টিকা দিতে হবে। যেহেতু এই রোগে মৃত্যু নিশ্চিত, তাই এক ডোজ টিকা দেয়াটাও বিপদ বয়ে আনতে পারে।
তিনি আরো বলেন, দুই ধরনের র্যাবিস বা জলাতঙ্ক রয়েছে। একটি হচ্ছে ফিউরিয়াস র্যাবিস, আরেকটি হচ্ছে প্যারালাইটিক র্যাবিস। এরমধ্যে ফিউরিয়াস র্যাবিস খুব ভয়ঙ্কর। এটির ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এছাড়া প্যারালাইটিক র্যাবিস অতটা ভয়ঙ্কর নয়। এতে লক্ষণ সবগুলো প্রকাশ পায় না। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে–কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্যকোনো প্রাণী কামড় ও আঁচড়ের পরে যদি সেই জায়গায় চুলকায় তবে ধরে নিতে হবে এটি জলাতঙ্ক রোগ। জলাতঙ্ক রোগীরা পানি দেখলে ভয় পান। আলো কিংবা বাতাসের সংস্পর্শে এলে এ ভীতি আরও বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা নিঃসৃত হয়। অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং মানুষ দেখলে কামড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে কার্ডিয়াক হয়ে অ্যারেস্ট হয়ে মারা যায়। এটি এমন এর রোগ যার মৃত্যু অবধারিত।