জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে আতঙ্ক নয় সচেতনতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিস দিবস। জলাতঙ্ক রোগের জন্য র‌্যাবিস ভাইরাস বহনকারী প্রাণী দায়ী। জলাতঙ্ক রোগ হলে মৃত্যু অবধারিত। তবে সময় মতো টিকা নিলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কুকুর কিংবা বন্যপ্রাণীর কামড় ও আঁচড় লাগলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১২টি দেশে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ জলাতঙ্ক রোগ কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের কারণে হয়। বাকি ২ থেকে ৩ শতাংশ জলাতঙ্ক রোগ হয় বিড়াল, শিয়াল কিংবা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে। সাধারণত জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ৯ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। এছাড়া জীবনের যে কোনো সময়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপপরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জলাতঙ্ক একদিকে শতভাগ বিপজ্জনক, অপরদিকে শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। আক্রান্তের পরপর চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক যথাসময়ে এন্টিরেবিস টিকা প্রদান করে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করা যেতে পারে। জলাতঙ্ক এখন পূর্বের মতো ভয়ের বিষয় নয়, বরং মানুষ সচেতন হলেই এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

জানতে চাইলে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুই ধরনের র‌্যাবিস বা জলাতঙ্ক রয়েছে। একটি হচ্ছে ফিউরিয়াস র‌্যাবিস, আরেকটি হচ্ছে প্যারালাইটিক র‌্যাবিস। এর মধ্যে ফিউরিয়াস র‌্যাবিস খুব ভয়ঙ্কর। এটির ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এছাড়া প্যারালাইটিক র‌্যাবিস অতটা ভয়ঙ্কর নয়। এতে লক্ষণ সবগুলো প্রকাশ পায় না। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবেকুকুর বিড়াল কিংবা অন্যকোনো প্রাণী কামড় ও আঁচড়ের পরে যদি সেই জায়গায় যদি চুলকায় তবে ধরে নিতে হবে এটি জলাতঙ্ক রোগ। জলাতঙ্ক রোগীরা পানি দেখলে ভয় পান। আলো কিংবা বাতাসের সংস্পর্শে এলে এ ভীতি আরও বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা নিঃসৃত হয়। অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং মানুষ দেখলে কামড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এছাড়া এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মারা যায়। এটি এমন এক রোগ যার মৃত্যু অবধারিত।

তিনি আরো বলেন, বিআইটিআইডি হাসপাতালে গত তিন বছরে জলাতঙ্কের টিকা না নেয়া ১১ রোগী এসেছেন। এদের সবাই মারা গেছেন। জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে কুকুর বা বিড়াল ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া যারা ঘরে কুকুরবিড়াল পালন করে ওইসব ক্ষেত্রে নিয়মিত টিকা দিতে হবে। অন্যদিকে কেউ যদি প্রাণী দ্বারা কামড় বা আঁচড়ে আক্রান্ত হন, তবে দ্রুত আক্রান্ত স্থানে ১৫ মিনিট ধরে সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে। এতে ৮০ শতাংশ জলাতঙ্কের ভাইরাস মরে যায়। পরবর্তীতে দ্রুত কোনো ধরনের পল্লী চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার আক্রান্তের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করবেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মডার্ন টিকার পদ্ধতি চালু করেছেন। এটিতে তিনটি ডোজ নিয়ে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে পূর্ণ ডোজ টিকা দিতে হবে। যেহেতু এই রোগে মৃত্যু নিশ্চিত তাই এক ডোজ টিকা দেয়াটাও বিপদ বয়ে আনতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশতদল-সিটি কর্পোরেশন নিষ্প্রাণ ড্র
পরবর্তী নিবন্ধবিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন ৩০ সেপ্টেম্বর