এমনিতেই জরাজীর্ণ ভবন। তার উপর অল্প বৃষ্টিতেই টিনের চালা বেয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি, বাইরের পানিও গড়িয়ে ঢুকেছে ভেতরে। এতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বারান্দা এবং ভেতরের মেঝেতে জলমগ্ন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে কয়েকটি ইট দিয়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভেতরে থাকা আরও কয়েকটি ইটের উপর দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। গতকাল রোববার সকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই চিত্র দেখা গেছে। অথচ এটি শিলক ইউনিয়নের ৩৫ হাজার বাসিন্দাসহ কোদালা ইউনিয়ন ও কোদালা চা বাগানসহ আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে অন্যতম নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাকেন্দ্র। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক বাজার এলাকায় তিন কক্ষের শিলক ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবন করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছরেও নতুন ভবন স্থাপন হয়নি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তিন কক্ষবিশিষ্ট ভবনের প্রত্যেক দেয়ালেই রয়েছে বিশাল বিশাল ফাটল। দেয়ালের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। জানালাও ভাঙ্গাচোরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে নেই কোনো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। নেই কোনো শৌচাগার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বাইরে লাগানো সাইনবোর্ডটিও নষ্ট। তবে ষাটের দশকে বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন শিলক, কোদালা ইউনিয়নের শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র জুড়ে বেহাল পরিস্থিতি, যে কোনো সময় ধসে পড়ে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয়দের দান করা জমিতে ১৯৫৫ সালে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একতলা টিনশেড ভবনটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর থেকে এই ভবনেই এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের সংস্কার না থাকায় বর্তমানে ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরপরও বিকল্প না থাকায় এখানে রোগীদের নিয়মিত সেবা দেয়া হচ্ছে।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক উপ–সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা মাসকুরা বেগম বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনের কথা আমি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সাড়া পাচ্ছি না। এখানে বিদ্যুতের সংযোগ ও শৌচাগারও নেই। এরপরও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ৩৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হয় বিধায় চিকিৎসা নিতে রোগীরা প্রতিদিন ভিড় জমালেও অনেক সময় রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হয়।’
স্থানীয় মাহমুদুল হাসান বাদশা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এ এলাকা থেকে অনেক দূরে। কর্ণফুলী পার হয়ে কিংবা গোডাউন ব্রিজ দিয়ে সড়কপথে যেতেও দীর্ঘপথ পেরুতে হয়। এ কারণে এই গ্রামের মানুষ এখানেই চিকিৎসা নিতে আসেন। জনস্বার্থে এটি সংস্কার করে এলাকার গরীব রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুব জরুরি।
লিয়াকত আলী জানান, তিনটি কক্ষসহ বারান্দার দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে ভেতরের জং ধরা লোহার রড বের হয়ে গেছে। সব দরজা–জানালা ভাঙ্গা। মরিচা পড়ে টিনের চালা ভেঙ্গে গেছে এবং কোথাও কোথাও ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। এ সময় চিকিৎসা–সরঞ্জামসহ কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। দেয়ালে শেওলা পড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ অঞ্চলের লোকজনের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রটি টিকে থাকা খুব জরুরি। শিলক কোদালা ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষের জন্য এই হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হাসপাতালটি দ্রুত মেরামত করা হোক।
শিলক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্মাণের পর থেকে এটির আর কোনো সংস্কার না করায় দিন দিন তা আরও খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেও জনস্বার্থে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একজন নারী চিকিৎসক সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন এলাকার শতাধিক রোগীকে। এই বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শনে আসেন। মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছি। তারপরও এটি হয়নি।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম বলেন, ‘শিলক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নতুন ভবন ইতিমধ্যেই অনুমোদন হয়েছে। আশা করি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’