বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রসায়ন পর্যালোচনায় এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে; কথিত বিশ্বায়নের সূচনা থেকেই অনুন্নত–স্বল্পোন্নত–উন্নয়নশীল বিশ্বের জাতিরাষ্ট্রসমূহে ক্ষমতাবান দেশগুলোর অনৈতিক প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। নিষ্ঠুর–কদর্য অপকৌশল অবলম্বনে অনুন্নয়নের উন্নয়নকে দীর্ঘস্থায়ী ও দুর্যোগ মোকাবেলায় পরাস্ত করার লক্ষ্যে উন্নত রাষ্ট্রসমূহের সৃষ্ট জলবায়ু সংকট পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে চলছে। ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ডেল্টা প্ল্যান– ২১০০ প্রণয়ন ও প্রায়োগিক পদক্ষেপ নির্ধারণ সম্পন্ন করেছে। এমডিজি–রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের সফল ও সার্থক অর্জন এবং এসডিজি ২০৩০–রূপকল্প ২০৪১ যথার্থ গুরুত্ব সহকারে দৃশ্যমান করার উদ্দেশ্যে সরকারের গৃহীত সকল পরিকল্পনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে প্রচন্ড লন্ডভন্ড। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রবাহসহ যাবতীয় উন্নয়ন উদ্যোগ তথা দারিদ্র দূরীকরণ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাষণ ও জনস্বাস্থ্য, পল্লী উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আর্তনাদে নিপতিত হয়েছে গরীব ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলো। বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নব্বইয়ের দশকে প্রণীত ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ্যাকশন প্ল্যান–এ জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়কে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ এর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন যাবৎ জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র বিশ্বের সমস্যা হলেও বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলো এর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে সবচেয়ে বেশি।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গসহ পুরো নিম্নাঞ্চলে ঝড়–বন্যা–ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়ে এসব এলাকা থেকে হাজারো পরিবার উদ্বাস্তু হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্বিষহ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। উদ্বাস্তু হওয়া পরিবারগুলোর শিশুরাও জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট চরম সংকটে নিপতিত। অধিকাংশ শিশুর পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে নিষিদ্ধ শিশুশ্রমে যুক্ত হচ্ছে। গত বছর আগস্টে জাতিসংঘ শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ তথা বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভারতসহ বিশ্বব্যাপী ৩৩টি দেশের প্রায় ১০০ কোটি শিশু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিশয় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বর্ণনামতে, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিশেষত খরা, বন্যা ও নদীভাঙ্গন দক্ষিণ এশিয়ার লাখো শিশুকে গৃহহীন করেছে। তাদের প্রয়োজনীয় খাবার, স্বাস্থ্যসেবা ও সুপেয় পানির সংকটে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব শিশু বিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০২১ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয় বার্ষিক শুমারি মতে দেশে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটির বেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝড়ে পড়া শিশুর হার ১৭ শতাংশের বেশি। সংখ্যা বিবেচনায় ২০ লাখের অধিক।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ’ প্রতিবেদনে অন্যান্য ঝুঁকির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে শীর্ষে দেখানো হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে বছরে প্রতি লাখে প্রায় ৩৩ জন মারা যাচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস সাইক্লোন স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জন্য নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে এর তীব্রতা ও সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগর ক্রমই উেত্তাল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ৭ জানুয়ারি ২০০৮ থেকে ১০ নভেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত সাগরে ৬টি জল–ঘূর্ণিঝড় এবং ১০৭টি লঘু ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্র দিনে দিনে বিক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০০৯ সালের ১২ থেকে ২১ জুলাই টানা নয় দিন চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর এবং কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। এ সময় কোনো জেলের পক্ষে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। জলোচ্ছ্বাসের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি উপকূলীয় এলাকার স্বাদু পানিকে লোনা করে দেয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং এর গবেষণা মতে, বাংলাদেশের উপকূলের ১৪টি শহর জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাত্রাতিরিক্ত গরমে ফসলী জমি নষ্ট হয়ে মানুষের জীবন–জীবিকা সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার খরার কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষণায় দেশের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশলীতা ব্যাপক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৫০ বছরে (১৯৬৮–২০১৮) দেশে দিনে ও রাতে উষ্ণতার হার বেড়েছে। একইভাবে দিন ও রাতের শীতলতা ভীষণ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ দশকে উষ্ণ দিনের সংখ্যা উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় প্রতিবছরে শূন্য দশমিক ৩৯৪ দিন এবং দেশের অভ্যন্তরভাগে শূন্য দশমিক ১৫ দিন করে বেড়েছে। এছাড়াও প্রতিবছর উষ্ণ দিনের সময়ও শূন্য দশমিক ৫০৭ দিন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টার গভার্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’র (আইপিসিসি) ৪র্থ সমীক্ষা অনুসারে, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ যা ২.৫০ থেকে ৩.৫০ সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সাধারণত মধ্য প্রাচ্য এবং উপসাগরীয় অঞ্চলেই তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। কিন্তু এই গ্রীষ্মকালে ইতালি ও কানাডায় যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৮ ও ৪৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হওয়ার পর পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার না কমালে বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল চেইঞ্জ ইন্সটিটিউটের সহযোগী পরিচালক তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রবণতার কারণ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির অধিকতর ব্যবহারকে শতভাগ দায়ী করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ১৯৮৫–১৯৯৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দুই দশক যাবৎ বজ্রপাত বাংলাদেশে নতুন দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে বজ্রপাত সম্পর্কিত গবেষণা অনুসারে বিশ্বের সর্বত্র বজ্রপাত সমহারে বাড়ছে না, তবে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বজ্রপাতের উপর উষ্ণায়নের প্রভাব সুস্পষ্ট। অর্থাৎ, সারা বিশ্বে না বাড়লেও দক্ষিণ এশিয়া বা ক্রান্তীয় অঞ্চলের অনেক দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। গণমাধ্যম সূত্রমতে ২০১৩–২০ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৮ জন, ২০২১ সালে ৩৬২ জন এবং চলতি বছর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মারা যায় ২২ জন। মৃতদের মধ্যে ৭২ শতাংশই কৃষক। বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করে দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ সমূহের মধ্যে রয়েছে দেশের এনডিসি আপডেট, ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশী বিনিয়োগে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে নিজস্ব শক্তির ৪০ শতাংশ নেয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালুকরণ ইত্যাদি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে উপকূলীয় এলাকায় বহু ভবন নির্মাণ করায় দুর্যোগে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন হারানোর হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে। বছরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সমান। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই পরিবেশের অনুষঙ্গগুলো অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা ২০০৯’ চূড়ান্ত করা হয়।
বর্ণিত উল্লেখ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ২০০৯–১০ অর্থবছরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) গঠন করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী উন্নত দেশের অর্থ প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা না করে নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের তহবিল গঠন বিশ্বে প্রথম যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। গত ২৬ মে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান–২১০০ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স : ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব ইমপ্লিমেন্টেশন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে ব–দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান–২১০০ বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশকে যাতে আমরা সুরক্ষিত করতে পারে। শুধু আজকের জন্য না, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ যেন টেকসই হয়, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে পারি।’
অতিসম্প্রতি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিওএমও) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে অয়োজিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনতে সরকার এরই মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান–২১০০ প্রণয়ন করেছে। একুশ শতকের শেষ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকসমূহ থেকে বাংলাদেশ নামক ব–দ্বীপকে রক্ষা করতে এই পরিকল্পনা একটি দীর্ঘস্থায়ী ভিশন হিসেবে কাজ করবে।’ জলবায়ুর গতি–প্রকৃতির উদ্ভট পরিবর্তনশীলতা যথার্থ উপলব্ধি–অনুধাবনে বাংলাদেশ সরকারের আগাম প্রস্তুতি এবং সঠিক পন্থা গ্রহণে চলমান পর্যায় থেকেই পরিকল্পিত ধারণা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের পর্যাপ্ত কর্মকৌশল শুধু বাচনিক বক্তব্যে নয়; বাস্তবতায় দেশপ্রেমিক–নির্মোহ–নির্লোভ–দক্ষ–যোগ্য ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে দেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবন–জীবিকা সুরক্ষায় পর্যায়ক্রমে এর প্রতিফলন অতীব জরুরি।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়