বঙ্গোপসাগরে বাঁশখালী-পেকুয়া-কুতুবদিয়া এলাকার কুখ্যাত জলদস্যু কবীর বাহিনীর প্রধান নুরুল কবীর, সেকেন্ড ইন কমান্ড মামুন ও তাদের ১৩ সহযোগী বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ র্যাবের হাতে আটক হয়েছে।
আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) র্যাব-৭ এর এক বার্তায় এ তথ্য জানা যায়।
গত ১৪ জানুয়ারি ১৭ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের তথ্য র্যাব-৮ থেকে সরবরাহ করা হয়। মুক্তিপণের ১০ লক্ষ টাকা দাবির প্রেক্ষিতে দুঃস্থ ও নিরীহ জেলেরা তাদেরকে ২ লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে একই ঘটনায় অপহৃত ভিকটিমদের পক্ষ থেকে র্যাব-৭ বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব সদর গোয়েন্দা বিভাগ, র্যাব-৭ ও র্যাব-৮ ভিকটিমদের উদ্ধারে ব্যপক আভিযান পরিচালনা করে। র্যাবের অভিযানের প্রেক্ষিতে জলদস্যুরা র্যাবের অভিযান টের পেয়ে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ পেয়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়। তারা মূলত কুখ্যাত জলদস্যু কবীর বাহিনীর প্রধানের কথা বলে মুক্তিপণ দাবি করে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি জলদস্যুরা কবীরের নেতৃত্বে ইউসুফের একটি নৌকা ভাড়া করে যার মধ্যে পেকুয়ার মগনামা ঘাট থেকে ৭ জন জলদস্যু এবং কুতুবদিয়া থেকে আরো ৮ জন জলদস্যু নৌকাটিতে উঠে। তারা পুনরায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ২১ জানুয়ারি র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক চৌকস দল চটগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে নুরুল আফসার, নূরুল কাদের, হাসান, মো. মামুনকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্য মতে বাকি জলদস্যুদের চকরিয়া থানার ডান্ডিবাজার এলাকার কবীরের আস্তানা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ২টি বিদেশী পিস্তল, ৬টি ওয়ানশুটার গান, ৪টি কার্তুজ, ৫টি ক্রিজ, ১টি ছুরি, ১টি রামদা, ২টি হাসুয়া উদ্ধারপূর্বক দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ আসামি মো. নুরুল কবির(২৯), মো. আব্দুল হামিদ প্রকাশ কালা মিয়া(৩০), আবু বক্কর(৩১), মো. ইউসুফ(৪৬), গিয়াস উদ্দিন(৩৭), মো. সফিউল আলম প্রকাশ মানিক(৩৬), মো. আব্দুল খালেক(৪৪), মো. রুবেল উদ্দিন(২৭), মো. সাইফুল ইসলাম জিকু(২৮), মো. সুলতানকে(৩৬) আটক করে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি অপহরণকৃত ১৭ জন জেলের মধ্যে ১৬ জনকে উদ্ধার করা হলেও জেলে নোয়াখালী সদরের চরকাউনিয়ার আন্ডারচরের আব্দুস সামাদের পুত্র আনোয়ার হোসেন এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। গ্রেফতারকৃত জলদস্যুদের কাছ থেকে জানা যায় যে গত ১৬ জানুয়ারি রাতে অপহৃত জেলেদেরকে ব্যাপক নির্যাতনের প্রাক্কালে জেলে আনোয়ার অসুস্থ হয়ে পড়ে। মারধরের এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন ব্যাপক অসুস্থতা বোধ করলে তাকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয়।
আটক জলদস্যুদের প্রায় প্রত্যেকের নামেই অপহরণ ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাবের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, তাদের ব্যাপক অভিযানের ফলে সুন্দরবন এলাকা জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে জলদস্যুরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, কুতুবদিয়া অঞ্চলকে বেছে নিলেও র্যাব-৭, চট্টগ্রামের ব্যাপক অভিযানের ফলে উল্লেখিত অঞ্চলগুলোকে জলদস্যু মুক্ত করা হবে।