জর্দানো ব্রুনো (১৫৪৮–১৬০০)। একজন ইতালীয় দার্শনিক, বিশ্বতত্ত্ব বিশারদ। ব্রুনো তার স্মৃতিবর্ধন পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত যা সংগঠিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মতবাদ প্রচার করেছিলেন যে, মহাবিশ্ব অসীম এবং এর কোনো কেন্দ্র নেই। আর এজন্য প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতার অপরাধে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। এ জন্য অনেকে তাকে চিন্তার মুক্তির জন্য নিবেদিত একজন ‘শহীদ বিজ্ঞানী’ হিসেবে গণ্য করে থাকেন। জর্দানো ব্রুনোা ১৫৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বতমালার অদূরে নোলা নামক ছোট্ট এক শহরে জন্মহণ করেন। ১৩ বছর বয়সে ব্রুনো নেপ্ল্সের সেন্ট ডোমিনিকান স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী ১০ বছর এই বিখ্যাত স্কুলেই পড়াশোনা করেন। ১৫৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্যারিসে আসেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর বাগ্মীতা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য খ্যাতি লাভ করতে শুরু করেন। প্যারিসে থাকাকালীন ব্রুনো তৎকালীন কিছু প্রচলিত দার্শনিক ধারণাকে হাস্য–রসাত্মকভাবে তুলে ধরেন তাঁর লেখা বই দ্যা টর্চ বেয়রার গ্রন্থে। ১৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রুনো ইংল্যান্ডে গমন করেন। কিন্তু এখানে ধীরে ধীরে অনেকের সাথে তাঁর মতের অমিল হতে শুরু করে। কারণ ব্রুনো বিশ্বাস করতেন পৃথিবী ‘গোল’। সেযুগে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী ‘সমতল’। মহাশূন্য নিয়ে তাঁর লেখা দ্য অ্যাশ ওয়েনসডে সাপার, ১৫৮৪), অন কজ, প্রিন্সিপল অ্যান্ড ইউনিটি, ১৫৮৪), অন দ্য ইনফিনিট ইউনিভার্স অ্যান্ড ওয়ার্ল্ডস, ১৫৮৪) দ্য এঙপালশন অফ দ্য ট্রায়ম্ফ্যান্ট বিস্ট, ১৫৮৪) এবং অন হিরোইক ফ্রেঞ্জিজ, ১৫৮৫) প্রকাশিত হয়। নিজের যুগের চেয়ে এগিয়ে থাকা বৈপ্লবিক ধ্যান–ধারণার কারণে ব্রুনো ধীরে ধীরে তাঁর বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হারাতে শুরু করেন। ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবার ফ্রান্সে ফিরে যান। ফ্রান্সে এসে তিনি গণিতবিদ ফিব্রিজো মরদেন্তের সাথে ভয়াবহ বাকবিতণ্ডাতে জড়িয়ে পড়েন। ব্রুনো ফ্রান্স থেকে চলে গেলেন জার্মানী। তিনি মারবার্গ থেকে যান উইটেনবার্গ। সেখানে মহান দার্শনিক এরিস্টটলের উপর বক্তব্য দেন।
এরিস্টটলের অনেক তত্ত্বের সাথে তিনি একমত ছিলেন না। ১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইতালি ফিরে আসেন। আসার কিছুদিন পরই জিওভাননি মচেনিগো নামে এক ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম ও ঈশ্বরে বিরোধিতার অভিযোগ আনেন। ১৫৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মে ব্রুনোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি পোপ ৮ম ক্লেমেন্ট তাকে একজন ধর্মদ্রোহী বলে রায় দেন ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সবার সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়।