ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণে বিধ্বস্তপ্রায় গাজা থেকে জর্ডান ও মিশরের আরও ফিলিস্তিনি নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এটা কী স্বল্প না দীর্ঘ মেয়াদের জন্য, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনোটাই হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজাকে ‘ডেমোলিশন সাইট’ বা ধ্বংসযজ্ঞের স্থান অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সোয়া এক বছরের যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী ভূখণ্ডটির ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে; এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে যে এখন সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট বিরাজ করছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির এক সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে অবস্থান জানলেন। গত বছর ওয়াশিংটন বলেছিলেন, তারা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিপক্ষে। মিশর, জর্ডান ও লেবাননে এমনিতেই বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থীর বাস। তারা কবে ফিরবে, আদৌ ফিরতে পারবে কিনা তারই নিশ্চয়তা নেই। এদিকে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ও ত্রাণ সংস্থা মাসের পর মাস ধরে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এসেছে; যুদ্ধ এরই মধ্যে ভূখণ্ডটির প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে, ঠেলে দিয়েছে ক্ষুধাজনিত সংকটের দিকে। খবর বিডিনিউজের।
এই নারকীয় যুদ্ধেও ইসরায়েলকে ধারাবাহিক সমর্থন দিয়ে আসায় বিশ্বজুড়ে ওয়াশিংটনের ব্যাপক সমালোচনা চললেও মিত্রকে ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্য–ইরানসমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী, যেমন গাজার হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিদের মোকাবেলায় ইসরায়েলকে রক্ষায় এ সহায়তা অব্যাহত রাখছে তারা।
গত শনিবার জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহর সঙ্গে হওয়া ফোনালাপ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমি তাকে বলেছি, আপনি আরও দায়িত্ব নিন কেননা এখন পুরো গাজা উপত্যকাকে দেখলে এর অবস্থা যে লন্ডভণ্ড তা দেখা যাবে, সেখানকার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আমি চাই তিনি (ফিলিস্তিনি) লোকজন নিয়ে যান। আমি চাই মিশরও লোকজন নিক। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসির সঙ্গে টেলিফোনে কথা হবে জানিয়ে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আপনারা বলছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কথা, এদেরকে সরিয়ে নিতে হবে আমাদের। সত্যিকার অর্থে এটা এখন ধ্বংসযজ্ঞের স্থান, প্রায় সব ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানকার মানুষজন মারা পড়ছে। তারচেয়ে আমি কিছু আরব দেশের সঙ্গে কথা বলে অন্য কোথাও ঘরবাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি, যেখানে তারা হয়তো শান্তিতে থাকতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড পাবে : গত শনিবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রই গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পাবে এমনটা বিশ্বাস করেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ধারণা, সেখানকার লোকজন আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়। আমি সত্যিই জানি না, ওই দ্বীপের ওপর ডেনমার্কের দাবি কেমন, কিন্তু তারা যদি আমাদের নিয়ন্ত্রণে দিতে না চায় তাহলে তা হবে খুবই অবন্ধুসুলভ কাজ, কেননা এটা করা দরকার মুক্ত বিশ্বের সুরক্ষার জন্য। আমি মনে করি গ্রিনল্যান্ড আমরা পাবো, কারণ এটি বিশ্বের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর আর কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, আমরাই ওই স্বাধীনতা দিতে পারবো। তারা পারবে না।
তার কণ্ঠে এমন আত্মবিশ্বাস দেখা গেলেও দ্বীপটি বিক্রির জন্য নয় বলে বারবারই বলে আসছেন ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেদে বলেছেন, ভূখণ্ডটির ভূমিতে কী করা হবে তা কেবল ‘গ্রিনল্যান্ডেরই বিষয়’। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে না চাইলেও প্রতিরক্ষা ও খননকাজে দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহও ব্যক্ত করেছেন তিনি। চলতি মাসের শুরুর দিকে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ফেদেরিকসেন বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ড কেবল এর বাসিন্দাদেরই, স্থানীয়রাই এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম রুটে অবস্থিত, যা এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। দ্বীপটিতে একটি বড়সড় মার্কিন মহাকাশ কেন্দ্রও আছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে বিরল খনিজ, ইউরেনিয়াম, লোহার মতো গ্রিনল্যান্ড যেসব প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সেগুলো খননেও অনেকের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। দ্বীপটি মোটাদাগে স্বায়ত্তশাসিত হলেও এটি এখনো ডেনমার্ক রাজ্যের অংশ। তবে দ্বীপটির বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও বিদ্যমান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফের যোগদান : শনিবার লাস ভেগাসে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফের যোগদানের বিষয়টি তিনি ভেবে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, হয়তো আমরা ফের সেখানে যোগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারি। আমি জানি না, হয়তো। তবে তার আগে তাদের অনেক কিছুই ঠিক করা লাগবে।
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ২২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাবে। দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার দিন গত সোমবারই ট্রাম্প এ পদক্ষেপ নেন। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবচেয়ে বড় আর্থিক পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র; সংস্থাটির মোট প্রাপ্ত অর্থের ১৮ শতাংশের মতো এসেছে দেশটি থেকে। জাতিসংঘের এই সংস্থার সর্বশেষ ২০২৪–২৫ সালের বাজেট ৬৮০ কোটি ডলার।
লাস ভেগাসে সমাবেশে যোগ দেওয়া জনতাকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জনসংখ্যার বিচারে তার চেয়ে বড় দেশ চীনের চেয়ে বেশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় খরচ করছে এমনটা দেখে তিনি অসন্তুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, তিনি সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে অনুরোধ করবেন।