জরুরি পরিস্থিতিতে কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত

রতন বড়ুয়া | শুক্রবার , ১৪ জুলাই, ২০২৩ at ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড স্থাপনে তোড়জোড় শুরুর কথা জানা গেছে আগেই। এ নিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে একটি প্রস্তাবনাও দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবনায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়হাসপাতালের নিচতলায় থাকা কোভিড ইউনিটে (করোনা ব্লক) বর্তমানে হাতে গোনা মাত্র ২/১ জন করে রোগী ভর্তি থাকছে। এই কয়েকজন কোভিড রোগীর জন্য পুরো ওয়ার্ডটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে হাতে গোনা এসব কোভিড রোগী আগের মতো চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা যায়। এতে করে চমেক হাসপাতালের কোভিড ইউনিটটি খালি হলে সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। চমেক হাসপাতালের এই প্রস্তাবনা খারাপ না বলে ওই সময় মন্তব্য করেছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে এ সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে চমেক হাসপাতালে। হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন, চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান, চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুর সাত্তার, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও চমেক হাসপাতালের কয়েকজন সহকারী পরিচালক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধিও বৈঠকে ছিলেন। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে চমেক হাসপাতালের কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। সেক্ষেত্রে কোভিড রোগীকে চমেক হাসপাতালের পরিবর্তে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন এ সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে। চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন চাইবে, তাদের কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তর করতে পারবেন। আর কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হলে সেখানে আর কোভিড রোগী ভর্তি রাখা হবেনা। কোভিড রোগীদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হবে।

তবে জটিল কোভিড রোগীদের (বিশেষ করে কিডনি ডায়ালাইসিস প্রয়োজন এমন) প্রয়োজন হলে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এমন তথ্য জানিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, যেহেতু বর্তমানে কোভিড রোগীর সংখ্যা কম, আমাদের এখানেই রাখা যাবে। তবে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন এমন কোভিড রোগীর চিকিৎসা সুবিধা আমাদের এখানে নেই। যা চমেক হাসপাতালে রয়েছে। তাই জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে যাতে চমেক হাসপাতালেও শিফট করা যায়, সে ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আমরা বলেছি।

সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনো ওরকম পরিস্থিতি হয়নি। রোগীর সংখ্যা বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই এখন যেভাবে চলছে, আপাতত সেভাবেই চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। তবে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে বা জরুরি পরিস্থিতি দেখা দিলে সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলাদা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে আলাদা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে গত শনিবার সকালে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আলাদা ওয়ার্ড স্থাপনে জায়গা সংকটের বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। এক পর্যায়ে হাসপাতালের নিচতলায় থাকা কোভিড ওয়ার্ডটি (করোনা ব্লক) ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহারের আলোচনা জোর গতি পায়। বৈঠকের আলোচনা সূত্রে জানা যায়চমেক হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে হাতেগোনা কয়েকজন করে রোগী ভর্তি থাকছে। এই কজন রোগীর জন্য পুরো ওয়ার্ডটি অন্য রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই কোভিড পরিস্থিতি শুরুর সময়ের ন্যায় করোনা রোগীদের যদি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল বা এরকম কোন একটি ডেডিকেটেট হাসপাতালে ভর্তি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, তবে চমেক হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডটি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে। এতে করে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিশ্চিত হবে। এ নিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে কথা বলে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, চমেক হাসপাতালের ৫টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছেমেডিসিনের তিনটি (১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড) ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের দুটি ওয়ার্ড (৮ ও ৯)। এর মাঝে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গু কর্ণার করে (এক পাশে রাখার ব্যবস্থা) আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। শিশু ওয়ার্ডেও এক পাশে রেখে রোগীদের চিকিৎসার কথা বলছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। তবে এক পাশে হলেও একই ওয়ার্ডের ভেতর হওয়ায় সাধারণ রোগীরাও থাকছেন পাশাপাশি। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষনিক মশারির ভিতর থাকার কথা বলা হলেও তারা মশারির ভিতর থাকতে চাননা। এতে করে সাধারণ রোগীরাও ঝুঁকিতে আছেন।

এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৫ জনে। আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৭৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মাঝে চমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৬২ জন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ জন। এছাড়া অন্যান্য হাসপাতালে আরো ১৯২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধর‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ফের প্রত্যাহার চাইল ঢাকা
পরবর্তী নিবন্ধঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত