জরিমানা-কড়াকড়িতেও থেমে নেই মানুষের চলাচল

জেলা-উপজেলায় লকডাউন চিত্র

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

আশঙ্কাজনক ভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা-উপজেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে তৎপরতা জোরদার করেছে প্রশাসন। কিন্তু পুলিশ-সেনা যৌথ টহল, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, জরিমানা, কড়াকড়িতেও যেন মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।

হাটহাজারী
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, করোনা মহামারী প্রতিরোধকল্পে সরকার ঘোষিত লকডাউনে গতকাল শুক্রবার হাটহাজারীতে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। তাছাড়া জনসচেতনতার জন্য ব্যাপক প্রচারাভিযানও করা হয়। অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্লাহ জানান, গতকাল শুক্রবার অভিযান পরিচালনা করে ৮টি মামলায় ৮ হাজার ৪শ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। জনসচেতনতার লক্ষ্যে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় হাটহাজারী পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দরবার হোটেলকে ৪ হাজার টাকা, কাচারি রোডে এবিএম স্টোর কসমেটিকসকে ১৫০০ টাকা, দ্বীনি কুতুবখানাকে ১ হাজার টাকা, হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি রোডে এস এস ট্রেডার্সকে ১৫০০ টাকা এবং দরবার হোটেলের ভেতরে বসে খাবাররত অবস্থায় পাওয়া চারজন কাস্টমারকে ১০০ টাকা করে ৪০০শ টাকা জরিমানা করা হয়। হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহযোগিতা প্রদান করে।
পটিয়া
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়া স্বাস্থ্যবিধি অমান্য ও দোকানে বসে আড্ডা এবং কঠোর লকডাউন না মানার অপরাধে ৮ মামলায় ১২৫০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শুক্রবার সারাদিন পৌরসভা বাসস্টান্ড, উপজেলার কচুয়াই, বাহুলী, বৈলতলীসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াছমিন। অভিযান পরিচালনাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সহযোগিতা করেন পটিয়া থানার একদল পুলিশ।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, করোনা পরিস্থিতি দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকার কঠোর লকডাউন দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে অহেতুক ঘোরাফেরা করছে। বিভিন্ন দোকানে সরকারি আদেশ অমান্য করে ব্যবসা বাণিজ্য চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি আদেশ পালনে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাঁশখালী
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল) আইন-২০১৮ এর আওতায় ১৭টি মামলায় ৯ হাজার ৬শ টাকা জরিমানা করা হয়।
বাঁশখালীতে লকডাউনে কঠোর নজরদারির অংশ হিসাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও বাঁশখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি মোবাইল কোর্ট বাঁশখালীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। সকাল থেকে সামান্য কিছু লোকজন রিকশায় চলাচল করলেও প্রশাসনের টহল জোরদারের সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যায় সড়ক। এ সময় অকারণে বের হওয়া সিএনজি অটোরিকশা, মোটর সাইকেল ও দোকানদারকে ১৭টি মামলায় ৯ হাজার ৬শত টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সবাইকে নিজ তাগিদে সচেতন হয়ে স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে।
সীতাকুণ্ড
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত ২১ দিনে এ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৯৮ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৫৫৬ জন। সে হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। শুধুমাত্র গতকাল শুক্রবার সর্বেঋচ্চ ৪২ জন করোনা পজিটিভ হয়েছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনে প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে চোর-পুলিশ খেলা চলছে। প্রশাসন অভিযান ও জরিমানা করেও স্থানীয়দের ঘরে রাখতে পারছে না। গত ১ জুলাই থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩০টি মামলায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানের সময় স্থানীয় লোকজন এলাকা ত্যাগ করলেও অভিযানের শেষে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। বাইরে বের হওয়া বেশিরভাগ লোক অকারণে ঘুরাফেরা করছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলা থেকেও সন্ধ্যার পর মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। মহাসড়কের চেয়ে গ্রামের অলিগলিতে সারাদিনভর চলে মানুষের আড্ডা। যাদের সিংহভাগেরই মুখে মাস্ক থাকে না। উপজেলার প্রতিটি বাজারে মানছে না কেউ সরকারি বিধি নিষেধ। বাজারের শত শত মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে আসলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা পাশের গলিতে চলে যায়। আবার ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলে বেচা বিক্রি শুরু করে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বয়স বিবেচনায় ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুবকেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যু বেশি হচ্ছে ৫০ উর্ধ্ব ব্যক্তিদের। সীতাকুণ্ডে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে মোট ৩১ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্ররিদ্র মানুষের জন্য করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার পর পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। ফলে শনাক্তের সংখ্যাও বেড়েছে। শনাক্তের বিবেচনায় যুবকেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তারা লকডাউন অমান্য করে বাইরে ঘুরাফেরা করার কারণে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে বলে তাদের ধারণা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, মানুষ সচেতন না হলে অভিযান করে ঘরে রাখা কষ্টকর। এখন তিনি বিভিন্ন অলিগলিতে আড্ডা বন্ধ করার দিকে জোর দিচ্ছেন। এজন্য দিনের বেলায় মহাসড়ক সংলগ্ন বাজার ও বিকেলে বিভিন্ন অলিগলিতে অভিযান পরিচালনা করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৩ জনকে জরিমানা চসিকের
পরবর্তী নিবন্ধনতুন আতঙ্ক করোনার ‘ল্যামডা’ ভ্যারিয়েন্ট