চট্টগ্রাম-সিলেট রেল লাইনে গত দুই বছরে ১৭০টি রেল সেতু মেরামত করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে দীর্ঘ রেল লাইনের স্লিপার, রেল ও ফিটিংস। এছাড়া রেল জয়েন্ট ওয়েল্ডিং করণ, ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও দীর্ঘ এই রেলপথের অবস্থা জরাজীর্ণ। মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু ও জরাজীর্ণ লাইনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই রেলপথ।
জাতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে এই চিত্র। চট্টগ্রাম-সিলেট রেল লাইনের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেল সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখ্য সচিবের কাছে ১৩ পাতার একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। গোপন এই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে বেশ কিছু।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৭৯ কিলোমিটার আখাউড়া-সিলেট রেলপথের পুরোটাই জরাজীর্ণ। এই সেকশনে ৯০ শতাংশ সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ। তার মধ্যে ১৩টি মহাঝুঁকিপূর্ণ সেতু (ডেড স্টপ)। সেই সঙ্গে এই রুটের সব ট্রেনের বগি-ইঞ্জিন অনেক পুরনো। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য মতে, নির্মাণের ৫০-৫৫ বছর পরই সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ এ রুটের ৯০ শতাংশ সেতুর বয়সই ৭০ বছর পেরিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ রকম ১৩টি স্পটকে ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু ‘ডেড স্টপ’।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনি এক্সপ্রেসে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন। তবে এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে গত বছর অনেক কাজ করা হয়েছে। তবে কোনো কাজই টেকসই হয়নি। স্লিপারের কাজ করা হয়েছে, রেল লাইনের কাজ করা হয়েছে, ব্রিজের কাজ করা হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ৭টি তদন্ত কমিটিও হয়েছে। কিন্তু কোনো শাস্তি হয়েছে তা শোনা যায়নি। ২০১৯ সালে এই রুটে অন্তত ২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে ২৩ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায়। সেদিন ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি সেতু ভেঙে ছড়ায় পড়ে যায়। এতে পাঁচ জন নিহত ও শতাধিক যাত্রী আহত হন। জানা গেছে, প্রতিটি ছোট-বড় দুর্ঘটনায় তদন্ত হয়, কিন্তু প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পায় না। নানা ধরনের প্রভাবে তারা পার পেয়ে যায়।
রেলওয়ে প্রকৌশল এবং পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত বছর সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ৬ ডিসেম্বর। সেদিন দুপুরে মাধবপুরের শাহাজীবাজার রেলস্টেশনের পাশে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এ কারণে ১৩ ঘণ্টা সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এর আগে ১১ নভেম্বর সিলেট ও মৌলভীবাজারের মধ্যবর্তী ভাটেরায় মালবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ। এর আগে ৭ নভেম্বর সাতটি বগি নিয়ে শ্রীমঙ্গলে তেলবাহী একটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। এতে ২৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে রেল যোগাযোগ। এর আগে ৩০ অক্টোবর সিলেট রেলস্টেশনে ডকইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের সামনের দিকে ধাক্কা দেয় জয়ন্তিকা এঙপ্রেস। এছাড়াও ঘটেছে আরও ছোট-বড় অনকে দুর্ঘটনা।











