জয় হোক নারীর

নেভী বড়ুয়া | রবিবার , ৯ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

নারী অতি সংবেদনশীল একটি আপেক্ষিক সত্তা, একটি সম্পর্ক যে কখনো আদরের রাজকন্যা, আদরনীয় ভগ্নি, কখনো লাবণ্যময়ী প্রেমিকা, কখনো প্রেমময়ী স্ত্রী, মমতাময়ী মাতা তবে আমি বলবো নারী সকল সম্পর্কের উর্ধ্বে একটি পরিবারের পরম নির্ভরতা, একটি পরিবারের সৌন্দর্য। যে প্রাণ সত্তাটির অনুপস্থিতিতে পার্থিব জীবনের সব ছন্দের যেন নিমিষেই ছন্দপতন হয়, ঢাকা পড়ে যায় সবকিছু অশুভর অন্তরালে। নারী শুভ, নারী লক্ষ্মী, নারী অন্নপূর্ণা। নারীকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারলেই ঋদ্ধ হবে সমাজ। নারীর মূল্যায়নই হবে ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ একজন নারী প্রথমে শিশুকন্যা, কিশোরী, যুবতী পরে পরিণত নারী। এই পরিণত নারী অত্যন্ত ধৈর্যশীল সহনশীল ও স্থিতিস্থাপকও বটে। সমাজের পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে চলা যেন তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। বাবার ঘর, স্বামীর ঘর পরিশেষে ছেলের ঘরে নারীর চলাচল। এই চলাচলে নারীর পথ কখনো মসৃণ, আনন্দময়, কখনো কন্টকময়, কখনো অবহেলিত, কখনো নির্যাতিত। এসব অনুকূলতা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে সাবাস নারীরা নিজের যোগ্যতা দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। যোগ্যতা, ক্ষমতা, অধিকার, আত্মসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, আত্মমর্যাদা নারীদের ভূষণ। তাত্ত্বিক কথায় বলা হয় নারীরা আজ পিছিয়ে নেই, নারীরা আজ দ্বিগ্বিজয়ী। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই বাস্তবতায় দেখা যায় এখনো নারীদের জয় নারীদের ভাগ্য নির্ভর করে পুরুষের ওপর। শ্বশুরবাড়ির অন্যান্যদের পাশাপাশি বিশেষ করে স্বামীর বন্ধু সুলভ আচরণ, প্রতিষ্ঠা, সততা, সদ্বব্যবহার, দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ সবকিছুই একটি নারীর জীবনকে সিংহভাগ প্রভাবিত করে। নিজের চেষ্টার সাথে সাথে পরিবারের পুরুষের সর্বাত্মক সহযোগিতায় একজন নারী সমাজের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে একজন নারীর জীবনের পট পরিবর্তন করে দেয়। যেমন একজন নারী সে ধনী বাবার ঘরে রাজকন্যা, বিয়ের পর সে সম্মান মর্যাদা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধি সবই হয়ত পায় আবার হয়ত পায়না হয়তোবা নানাকারণেজীবনে যুদ্ধ করতে করতে সাংসারিক জীবন নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে আবার বিপরীতভাবে একটি নারী গরীব বাবার ঘরে কষ্ট করতে করতে নিজেকে যে লৌহমানবীতে পরিণত করেছে। সে হয়ত স্বামীর ঘরে আত্মমর্যাদা রক্ষা করে সম্মানের সাথে সুখ সমৃদ্ধিতে ঘরকন্না করছে। তাই নারীর জীবনসঙ্গী বা পরিবারের অন্যান্যরা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নারীর মূল্যায়ন, নারীকে সম্মান, নারী মর্যাদা তা সম্পূর্ণ পারিবারিক নৈতিক মূল্যবোধের প্রভাব। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি সন্তানদের নৈতিকতা, মূল্যবোধের শিক্ষা পরিবার হতে এমনভাবে দিতে হবে যেন নারী পুরুষ একজন আরেকজনের মানসিক শান্তি, শক্তি, বিশ্বাস ও নির্ভরতার দৃষ্টান্ত হয়। এ যুগের নারীরা আজ বড় বড় ডিগ্রী নিচ্ছে, কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করছে, মেধা দক্ষতার সাথে সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণও করছে, সমাজ প্রজন্ম গঠনে ভূমিকা রাখছে। এই সকল ব্যাপারে একটা বিশাল পরিবর্তনও এসেছে সমাজে, কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে তাদের আর্থিক পরিবর্তন কতটুকু এসেছে, তারা কতটুকু স্বনির্ভর, সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে তা এখনও প্রশ্ন সাপেক্ষ।

সাহিত্যেও যুগ যুগ ধরে কবি সাহিত্যিকরা সমাজে নারীদের অবহেলিত প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসে প্রথাগত সমাজ ভেঙে রোহিনীর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করেননি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গৃহদাহ উপন্যাসে অচলা চরিত্রটি কিছুটা সাহসী হিসেবে রূপায়িত হলেও শেষাবধি সমাজপ্রথার কাছে পরাজয় বরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চোখের বালি উপন্যাসের বিনোদিনী সমাজের নিয়মের কাছে সমর্পিত হয়েছে। কিন্তু নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন হাল ছাড়েননি, তিনি তাঁর লেখনীতে নারীকে অত্যন্ত মর্যাদাবান হিসেবে চিত্রায়ন করার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। বেগম রোকেয়া নারীজাগরণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন দিনের প্রত্যুষে তা আজ অনেকাংশে সত্য হচ্ছে আর দিন শেষে কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায় বলতে হয় -‘সব পাখি ঘরে আসে, সব নদী ফুরায় জীবনের সব লেনদেন। থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’। জয় হোক নারীর। প্রতিষ্ঠা পাক অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবতাই বড় ধর্ম
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে