মুহুর্মুহু জয় বাংলা স্লোগান, আতশবাজির ঝলকানি, গিটার–ড্রামসের ছন্দে তালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান আর ফাঁকে ফাঁকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মিলেমিশে কাল নতুন করে উজ্জীবিত করলো চট্টগ্রামের তারুণ্যকে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম প্রকম্পিত হলো মুক্তির বারতা আর দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে। চট্টগ্রামে কনসার্ট হয় না। তদুপরি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনটিকে স্মরণ করে আয়োজিত জয় বাংলা কনসার্ট আলোড়ন তুলবে–এটাইতো স্বাভাবিক।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) তারুণ্যের প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা প্রতি বছর এ আয়োজন ঢাকায় করলেও এবার অনুষ্ঠিত হলো চট্টগ্রামে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে শুরু হয় জয় বাংলা কনসার্ট। স্থানীয় ব্যান্ডদল ‘তীরন্দাজের’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় ২০২৪ সালের এ কনসার্ট। প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তারা জনপ্রিয় একেকটি গান পরিবেশন করতে থাকে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থেকে প্রচারিত গান ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ পরিবেশন করেন তারা। এ আয়োজন শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে স্টেজের সামনে ভিড় জমাতে থাকে উচ্ছ্বসিত তরুণ–তরুণীরা। এরপর একে একে বেলা ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে মঞ্চে ওঠে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড কার্নিভাল, বেলা সাড়ে ৪টার দিকে মেঘদল ও বেলা ৫টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠে অ্যাভোয়েড রাফা। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে লালন, ৭টা ৪০ এর দিকে ক্রিপটিক ফেইট, রাত ৮টা ৩৫মিনিটের দিকে নেমেসিস, ৯ টা ৩৫ মিনিটে চিরকুট আর সবশেষ রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে মঞ্চে উঠে ব্যান্ড আর্টসেল। তাদের পরিবেশনায় উল্লেখযোগ্য ছিল কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত তিনটি গান, ‘চল চল চল’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ এবং ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। প্রতিটি ব্যান্ডই যথাক্রমে ৪৫ মিনিট করে পরিবেশনা করে।
স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টটি উপভোগ করেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রাম ১ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান রুহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপভোগ করতে এসে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামের মাটি বীরদের মাটি। এ চট্টগ্রামে অনেক বিপ্লবী ও বীরের জন্ম হয়েছে। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের তরুণ–তরুণী ৭ মার্চের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হোক। দেশের সেবায় এগিয়ে আসুক। ৭ মার্চের ভাষণ যে একটা স্পিরিট, এটাই ছড়িয়ে দেওয়া সিআরআই এবং ইয়ং বাংলার উদ্দেশ্য। কনসার্ট দেখতে এসে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী নাজিফা নিশাত বলেন, এই প্রথম চট্টগ্রামে জয় বাংলা কনসার্ট হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এতগুলো জনপ্রিয় ব্যান্ডদল একই মঞ্চে গান গাইতে এসেছে, এটা দেখতে ভালো লাগছে।
কনসার্টের আরেক দর্শনার্থী ফাহিম আহমেদ বলেন, জয় বাংলা কনসার্ট আমাদের ভেতরের দেশাত্মবোধকে জাগিয়ে তোলে। দেশাত্মবোধক গানগুলো আমাদের মতো তরুণদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এই কনসার্ট আয়োজন করে আসছিল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর তারুণ্যের প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ ও ২২ সালে কনসার্ট হয়নি। এবারই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এই কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে। এবার চট্টগ্রামে যে কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে তা তত্ত্বাবধান করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। কনসার্টে নারী দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয় আলাদা জোন। স্টেডিয়ামের ভেতরেই রাখা হয় খাবার ও পানীয় স্টল।