সুদূর আমেরিকা থেকে ‘পুকুর চুরি–পুকুর রক্ষা’ শিরোনামে অনলাইনে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় একটি কলাম পড়েছিলাম। খুব ভালো লাগলো। লিখেছেন বাংলাদেশের বনেদী কাগজ দৈনিক আজাদীর সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত সর্বজন শ্রদ্ধেয় এম এ মালেক। চট্টগ্রাম শহরের পুকুর ভড়াট নিয়ে তাঁর মনে যে দাগ লেগেছে তা স্পষ্ট। পাশাপাশি তিনি পুকুর ভরাট নিয়ে যে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন –তাও পরিষ্কার। কথা হলো–বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে? মনে পড়ে, সেই ৮০এর দশকের কথা–পোস্তারপাড় প্রাইমারী স্কুল শেষ করে বই–খাতা পুকুর পাড়ে রেখে দল বেঁধে পোস্তার পুকুরের শান্তজলকে অশান্ত করে তুলতাম। পুকুরের স্বচ্ছ (ক্রিস্টাল ক্লিয়ার) জ্বলে দেখা যেত তেলাপিয়া মাছের শতশত পোনা। আমরা পুকুরে ডুব দিয়ে দু’পা ছড়িয়ে কুলের দিকে যেতে কিছুটা বড় সাইজের তেলাপিয়া দুপা উপচিয়ে লাফিয়ে প্রাণে বেঁচে যেত। অবশ্য শেষে সবকটি আমরা ছেড়ে দিতাম। এটা ছিল আমাদের নিত্যদিনের বিনোদন। আমার বয়স যখন ৫ বছর। তখন কানাডা প্রবাসী বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ও চিত্রকর্ম শিল্পী সৈয়দ ইকবাল (চাচা) ও বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এ্যারোস্পেস ম্যান্যুফেকচার কোম্পানী ‘মেকডোনাল ডগলাস’ এর উইং ডিজাইনার প্রকৌশলী মুজাহিদ হোসেন এর হাতে পোস্তার পুকুরে সাঁতার শিখা। কী এক অন্যরকম ভালো লাগার শহর চট্টগ্রাম। পলোগ্রাউন্ড মাঠ, সিআরবি, জিলাপী পাহাড়, সদরঘাট, টাইগারপাস, যেখানে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতাম। বাবা রেলওয়েতে চাকরির সুবাদে পাহাড়তলী ডেবায় (হর্স সু লেক) মাছ ধরতে যেতাম বাবার সাথে।
শুনতাম, সে সময়ে নগরীতে ভেলওয়ার দিঘি, আগ্রাবাদ ডেবা, মধ্যম হালিশহর ডেবা, আরও কয়েকটি বড় ডেবা রয়েছে। যতদূর জানা যায়, পোস্তারপাড় পুকুর ঘেষে রয়েছে মসজিদ; যা বাংলার স্বর্ণযুগ আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে গড়া। পুরোনো মসজিদটি ভাঙার সময় পাওয়া একখণ্ড শিলালিপিতে যার প্রমাণ মেলে। তৎকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইতিহাসবিদ আবদুল করিম এটি আবিষ্কার করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক পুকুরটি ধীরে ধীরে এহাত থেকে ওহাত। হঠাৎ একদিন পুকুরটির মাঝ বরাবর তথাকথিত উন্নয়নের কোপ পড়লো। দুভাগে ভাগ হয়ে অধেক রাস্তা, আর বাকি অংশ পুকুর রয়ে গেল।
এখন চলছে দখল–বেদখলের খেলা। কচুরীপানা–ময়লা আবর্জনা, বাঁশ–গাছ, খুটি আস্তে আস্তে সব গিলে ফেলার প্রতিযোগিতা। এখন আর কেউ পোস্তার পুকুরের নাম নেয় না। দুলাইনের রাস্তা চলাচলের জায়গা হয়ে গেলো ছাগলের খোয়ার। এখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্বীকৃত ছাগলের হাট। আমার জীবদ্দশায় এ (পোস্তার পুকুর) স্বচ্ছ পুকুরের জীবন কাহিনি দেখে অন্ধের হাতি দর্শনের কথা মনে পড়ে গেলো। হায়রে প্রিয় শহর চট্টগ্রাম। তোমাকে বাঁচাতে এখনো সগৌরবে জেগে আছে আঞ্চলিক তথা জাতীয় দৈনিক বাব–দাদার পত্রিকা দৈনিক আজাদী। জয়তু দৈনিক আজাদী!
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।