সপ্তম দিনে এসে গতকাল শুক্রবার জমে ওঠে অমর একুশে বইমেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন মেলায় পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। প্রকাশক এবং বিভিন্ন স্টলের কর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে গতকালই সবচেয়ে বিক্রি হয়েছে।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে এ বইমেলা। হাটহাজারী থেকে গতকাল মেলায় আসেন ওসমান–শায়লা দম্পত্তি। সঙ্গে ছিলেন তাদের একমাত্র মেয়ে নুসাইবা। ওসমান আজাদীকে জানান, তিনি বেসরকারি ব্যাংক কর্মরত এবং তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষক। দুজনই কর্মজীবী হওয়ায় বইমেলায় আসার সুযোগ পাননি। তাই বন্ধের দিনে এসেছেন। কিনেছেন বইও।
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু আজাদীকে বলেন, প্রথম শুক্রবার হিসেবে প্রচুর মানুষ এসেছে। বিক্রিও বেড়েছে। তবে মানুষের অনুপাতে বিক্রি কম। এরপরও আমরা খুশি।
এদিকে গতকাল বইমেলা মঞ্চে ‘আলোকিত সমাজ গঠনে লেখক–নাট্যকারদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কবি অভীক ওসমানের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন লেখক রবিউল আলম। আলোচক ছিলেন সাংবাদিক মুস্তফা নঈম ও লেখক মিজানুর রহমান শামিম। রবিউল আলম বলেন, বই মানুষকে পরিশুদ্ধ করে তুলে। একটা ভালো বই সমাজকে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। আবার সামাজিক জীবনে একটা নাটক মানুষের মন দারুণভাবে নাড়া দিতে সক্ষম। একজন নাট্যকার একটা নাটকের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরতে পারেন। মোস্তফা নঈম বলেন, লেখক–নাট্যকার সমাজের অন্ধকার ও আলোর দিকগুলো তুলে ধরতে সক্ষম।
মিজানুর রহমান শামিম আলোচনায় বলেন, সমাজকে কলুষিত করার হাত থেকে মুক্ত করতে ভারতীয় সিরিয়ালগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। অভীক ওসমান বলেন, ভাষা আন্দোলনের সূচনা চট্টগ্রামের মাহবুবুল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’–কবিতা দিয়ে হয়েছে। আগামীর তরুণ প্রজন্মকে এই ইতিহাস মনে রাখতে হবে। একজন লেখক বা কবি মানুষের মনে দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে হাতেখড়ি সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, মোগলটুলি খান বাহাদুর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ এবং হালিশহর গ্রাহস্থ্য কলেজের শিক্ষার্থীরা। আমন্ত্রিত শিল্পীদের মধ্যে সংগীত পরিবেশন করেন দেশের অন্যতম শিল্পী আবদুল মান্নান রানা, ফাহমিদা রহমান, ফরিদ বঙ্গবাসী, এস.বি সুমি। প্রথম পর্ব পরিচালনা করেন পোস্তারপাড় আসমা খাতুন সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজ এর সিনিয়র শিক্ষক সিদ্ধার্থ কর দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী নাহিদা নাজু।
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বইমেলা শুরু হয়। ২৬ দিন ব্যাপি এবারের মেলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার ১০৭ প্রকাশনা সংস্থার ১৪০টি স্টল রয়েছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।