ঘড়ির কাটায় পাঁচটা বাজার পর থেকে মসজিদের বারান্দায় সারিবদ্ধ বসে যান মুসল্লিরা। বাবুর্চি ও স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত ইফতারি তৈরিতে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে আসা লোকজনও বাড়তে থাকে। সাড়ে পাঁচটা পেরোতেই মসজিদে ইফতারের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা ইফতারি পরিবেশন করা শুরু করেন। কেউ কাউকে চিনেন না। অথচ পাশাপাশি বসে করছেন ইফতার। তাদের একটাই পরিচয়–তারা রোজাদার। এই যেন এক সোহার্দ্য সমপ্রীতির মিলনমেলা। গতকাল নগরীর ওয়াসা মোড় এলাকার জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে এমন চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে আরো দেখা যায়, আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় মসজিদের স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মযজ্ঞ। স্বেচ্ছাসেবকরা প্লেটে প্লেটে ইফতার সামগ্রী পরিবেশন শুরু করেন। ইফতার সাজানো হয় বড় ধরনের ডিশেও। প্লেটে থাকে ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি, বেগুনি, জিলাপি, সিঙ্গারা, সমুচা, খেজুর ও শরবত। এছাড়া ইফতারের পাঁচ মিনিট আগে মোনাজাতে অংশ নেন সব মুসল্লিরা। আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার। মসজিদে কর্মরত একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, প্রতিদিন ইফতারিতে ছোলা, মুড়ি, খেঁজুর, পেঁয়াজু, বেগুনি, সমুছা এবং শরবত দেয়া হচ্ছে। মূলত বিকেল থেকে ইফতারি তৈরি ও পরিবেশনের ব্যস্ততা শুরু হয়।
জানা গেছে, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে গত ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি বছর রমজানে ইফতারির আয়োজন করে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তবে গত ২০১১ সালের চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইফতার আয়োজনের আওতা বাড়ে। এরপর থেকে প্রতি রমজানে ইফতারে অন্তত দেড় হাজার মুসল্লি মসজিদে ইফতার করে আসছেন। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ইফতার করতে আসা দিনমজুর রহিম উদ্দিন জানান, সবার সাথে ইফতার করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যায় বলে শুনেছি। এছাড়া এখানে কোনো ভেদাভেদ নাই। আমরা গরীব মানুষ নিজের টাকায় এত ভালো ইফতারি কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই এখানে ইফতার করতে এসেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন বলেন, আমি গত বছরও কয়েকটি রোজায় এখানে ইফতার করেছি। সবার সাথে ইফতার করতে অন্য রকম আনন্দ লাগে। এটাই ভ্রাতৃত্ববোধ।
বেসরকারি চাকরিজীবী মিশকাত উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আগ্রাবাদ থেকে একটি ব্যক্তিগত কাজ সেরে আসার সময় ওয়াসার মোড়ে নেমে যাই। বাসা মোহরাতে। যেতে যেতে ইফতারের সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে ইফতার করবো চিন্তা করেছি। এখানে ধনী গরীব সবাই একপ্লেটে ইফতার সারেন। কেবল রমজান মাস এলেই আমরা এই সম্প্রীতির বিষয়টি বুঝতে পারি।