করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার বসবে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার আসর। বলী খেলাকে ঘিরে হবে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। তবে লালদীঘি মাঠে নয়, পাশে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের অস্থায়ী মঞ্চে হবে বলী খেলা। আগামী ১২ বৈশাখ ২৫ এপ্রিল বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বলী খেলা চলবে। এছাড়া ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল তিনদিন বৈশাখী মেলা হবে। এবারের আয়োজন হবে ১১৩তম। গতকাল সকালে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। বহদ্দারহাট নিজ বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। মেয়র বলেন, আমরা চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে যুগ যুগ ধরে লালন করে আসছি। যারা নতুন প্রজন্ম আছেন, প্রবীণ আছেন সকলে মিলে প্রাণের আনন্দে বলী খেলা ও মেলাকে সুন্দর করে উপস্থাপন করি, যাতে সাধারণ মানুষ উপভোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে ঘোষণা এসেছিল এবার আবদুল জব্বারের বলী খেলা হবে না। এই খবর দেখে মানুষের মধ্যে হতাশার ভাব পরিলক্ষিত হয়। মেয়র হিসেবে বিভিন্নজন আমাকে মোবাইলে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে বলা শুরু করে, ঐতিহ্যবাহী মেলা কেন বন্ধ হবে? সাধারণ মানুষই বলতে শুরু করেছে এটা সাধারণ মেলা ছিল না। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য তৎকালীন আবদুল জব্বার এ মেলার প্রচলন করেছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য কুস্তি খেলার আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে আমারও কিছু দায়দায়িত্ব আছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম মেলা করব। মেলা কমিটির সকলকে ডেকে বসলাম। তারা বলেছে, মাঠ না পাওয়ায় মেলা আয়োজন করছে না। আমি বললাম, মাঠ না থাকতে পারে, তাই বলে কী ঐতিহ্যবাহী এ মেলা বন্ধ হবে? মেলা হতেই হবে।
তিনি আরো বলেন, একসময় লালদীঘি মাঠে সাধারণ মাটির উপর বালি দিয়ে বলী খেলা হতো। বেশ কিছুদিন ধরে ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের ছোট্ট একটা স্টেজ করা হয়। সেখানে বালি এবং বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে খেলার উপযোগী করা হয়। এখন জেলা পরিষদের যে চত্বর আছে সেখানে ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের স্টেজটা হবে। সেখানে বলী খেলাটা হবে। চারপাশে উন্মুক্ত থাকবে, মানুষ যাতে খেলা উপভোগ করতে পারে। অতীতেও রমজানে মেলা হয়েছে। মেলা বন্ধ হয়নি। কেবল করোনা পরিস্থিতির জন্য গত দুই বছর হয়নি।
মেয়র বলেন, এবার মাঠের সংস্কার কাজের জন্য বাইরে করা হচ্ছে। আগামীবার থেকে মাঠেই বলী খেলা হবে। মেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ মেলায় বিভিন্ন দুর্লভ জিনিসপত্র পাওয়া যায়। যেগুলো সারা বছর পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা যেমন আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে, ক্রেতারাও থাকে। কোনোভাবেই মেলা বন্ধ হতে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ২-৩ মাস আগে থেকে বলী খেলার প্রস্তুতি নেয়া হতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর হিসেবে নেয়া হতো। কিন্তু এবার সময় কম। আজ বৈশাখের তিন তারিখ। হাতে আছে মাত্র আটদিন। এখন আর স্পন্সর নেয়ার সময় নেই। সুতরাং মেলার জন্য যা যা লাগে সেটার ব্যবস্থা আমি করব। কোনো অসঙ্গতি হবে না। মেলার আগের যে জৌলুস ছিল, সবকিছু থাকবে। মেলার আনুষাঙ্গিক যা যা দরকার হয়, সব সহযোগিতা থাকবে। শুধু মাঠটা নাই। তফাৎটা এখানে। মাঠটা ছাড়া সবকিছু থাকবে। স্টেজ থাকবে, খেলাও হবে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে এই মেলা জড়িত। এটা আমরা বন্ধ হতে দিতে পারি না। আশা করি, চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, সেই ক্ষোভ-হতাশা আজ দূর হয়ে যাবে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে আয়োজক কমিটি মাঠ সংকটের কারণে এবার বলী খেলা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘোষণা দেয়।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করা হয়েছিল লালদীঘি মাঠ থেকে। মাঠের চার পাশে ছয় দফার ম্যুরাল স্থাপন করা হচ্ছে। মাঠটিকে সাজানো হচ্ছে নতুনভাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজ প্রায় শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হওয়ায় মাঠটি খুলে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে বলী খেলা আয়োজন না করার খবর জানাজানি হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান সাধারণ মানুষ। সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, লালদীঘির মাঠ বন্ধ থাকায় আমরা মেলা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমার দাদার নামে এই বলী খেলা ও মেলা হলেও এটা আমাদের পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা চট্টগ্রামবাসীর মিলনমেলা। স্থগিত ঘোষণার পর সাংবাদিক ভাইয়েরাসহ চট্টগ্রামের মানুষ যেভাবে সোচ্চার হয়েছেন, এর প্রেক্ষিতে মেয়র মহোদয় একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। বলী খেলা ও মেলা হবে-এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। তবে মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করব, আগামী বছর থেকে যেন বলী খেলাটা আবার লালদীঘির ময়দানে হয়, আপনি সেই উদ্যোগ নেবেন।
মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে আয়োজন করতে পারিনি। এবার মাঠ না পেয়ে স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলাম। মেয়র মহোদয় আলাপ করে এই ঐতিহ্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন, বলী খেলা পরিচালনাকারী (রেফারি) এম এ মালেক উপস্থিত ছিলেন।