জব্বারের বলীখেলা ও সাম্পান বাইচে যুক্ত হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

চট্টগ্রামে মোস্ট পাওয়ারফুল রক মিউজিক, এর সাথে সম্পর্ক না রাখা শিল্পকলার ব্যর্থতা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ মে, ২০২৫ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

আগামী বছর থেকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা এবং সাম্পানবাইচ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই দুই উৎসবে যুক্ত হবে সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডারেও। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সংবাদ সম্মলনে তিনি রক মিউজিকে চট্টগ্রামের অবদানের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া বিটিভি’র এক সময়ের জনপ্রিয় আয়োজন নতুন কুঁড়ি চালুর বিষয়েও ইঙ্গিত দেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আমরা অল্প কয়েকদিনের সরকার। আমাদের মূল কাজ হলো বড় স্কেলে কিছু কাজ করা সাংস্কৃতিক প্যারাডাইম শিফটের ক্ষেত্রে। সেটা আপনারা ইতোমধ্যে দেখতে পেয়েছেন। এবারের নববর্ষ স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় এবং ইনক্লুসিভ উৎসব হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিটা যেন বাংলাদেশের সবার হয়ে উঠে। কোনো একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর যেন না হয়। সেই কাজটা আমরা করছি। এর একটা বড় দিক হচ্ছে উৎসব। উৎসব আসলে একটা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক এঙপ্রেশন হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এখানে একটা বড় উৎসব জব্বারের বলী খেলা। সিডনির নাম বললে অপেরা হাউসের ছবি ভাসে। চট্টগ্রামের নাম বললে অনেক ছবি ভাসে, যার মধ্যে জব্বারের বলী খেলা একটি। আরেকটা হলো সাম্পানবাইচ। গত ১৯ বছর ধরে চলছে। এই সাম্পান তো চট্টগ্রামের হার্ট। হলুদ ট্যাঙি ছাড়া যেমন নিউইয়র্ক শহর চিন্তা করা যায় না, তেমনি সাম্পান ছাড়া চট্টগ্রাম চিন্তা করা খুব কঠিন। তিনি বলেন, উৎসব শুধু উৎসব না, যা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে লিংকআপ করতে পারি। এরকম জিনিসগুলোর একটা তালিকা আপাতত শিল্পকলা একাডেমিকে করতে বলেছি। তালিকা হলে তা ন্যাশনাল ক্যালেন্ডারে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে যারা এগুলো করেন তারা কারো সহযোগিতার জন্য বসে থাকেন না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তার দেশের মানুষদের করা গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা। জব্বারের বলী খেলা যারা আয়োজন করেন তাদের সাথে গতরাতে সভা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এই আয়োজনের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও যুক্ত হবে। এখানে কয়েকটা ফর্মে কাজ করবে। আমি বলতে পারি, জব্বারের বলী খেলা বাংলাদেশের কালচারাল হেরিটেজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ক্যালেন্ডারে যুক্ত হবে। সাম্পানবাইচের সাথেও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় যুক্ত হচ্ছে। আগামী বছরের আয়োজনে জব্বারের বলী খেলার সঙ্গে যেমন আমরা যুক্ত হচ্ছি।

সারা দেশের এ ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকা ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ কাজগুলো আমরা করে দিয়ে যাব। পরে যারা সরকার পরিচালনায় আসবেন তারা কনটিনিউ করবেন বলে বিশ্বাস।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামে মোস্ট পাওয়ারফুল হচ্ছে রক মিউজিক। বাংলাদেশের রক মিউজিক কিংবা যেটাকে আমরা ব্যান্ডসঙ্গীত বলি, এটাতে সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানদের। কিন্তু চট্টগ্রামের শিল্পকলার সঙ্গে রক মিউজিকের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানরা শিল্পকলাকে তার আখড়া ভাবতে পারল না, এটা শিল্পকলার ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা।

চট্টগ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় না থাকা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি আপনার সাথে একমত। আমরা যেভাবে স্ট্রাকচারগুলো করেছি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোরশিল্পকলা একাডেমি, আর্কিওলজি মিউজিয়াম এমনকি মন্ত্রণালয় নিজেস্ট্রাকচারগুলো কিন্তু এই আধুনিক সময়ের চাহিদা মেটানোর জন্য তৈরি করা হয় নাই। তিনি বলেন, আমরা যে অল্প কদিনের সরকার, আমাদের পক্ষে এটা রিস্ট্রাকচারিং করা খুব কঠিন কাজ। এটার জন্য ইলেকটেড গভর্নমেন্ট লাগবে। পাঁচ বছরের টার্মেও পারবে কিনা জানি না। পরপর দুই মেয়াদে যদি একই সরকার থাকে, তারা যদি বোঝে যে দেশের জন্য এটা ভালো, সেটা আমার কনটিনিউ করা উচিত, তাহলে সেই চেঞ্জ আসবে।

চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট এখনো চালু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এটা নির্মাণাধীন। শেষ হবার পরে বুঝতে পারব কখন খুলে দেওয়া যাবে। আমাদের সকল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন দর্শন হলোদালান বানাও। দালানের ভেতর কী হবে, আর খবর নাই।

তিনি বলেন, শিল্পকলা একাডেমির বহু জায়গায় এমন অনেক অডিটোরিয়াম আছে যেখানে ৫০ জন লোকও যায় না। মাসে পাঁচবারও ব্যবহার করা হয় না। সেখানে মাসে কয়েকটা প্রোগ্রামও হয় না। আমাদের কারিকুলাম নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। তিনি বলেন, আমাদের ক্যানসার কোথায়, এটা আমরা আইডেন্টিফাই করেছি। এ অনুযায়ী কিছু ব্লুপ্রিন্টও দেব। আমাদের এ সীমিত সময়ে সব সমস্যা আমরা চিহ্নিত করতে পারব না। তবে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের রাস্তা আমরা বলে যাব। এত যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, আমাদের অল্পদিনে সেগুলো দূর করা সম্ভব নয়। তবে আমি যাবার আগে, আমরা একটা ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছি যে, আগামী পাঁচ বছরে কী করা উচিত, দশ বছরে কী করা উচিত। আমরা যাওয়ার আগে আমি একটা প্রেস কনফারেন্স করব, সেখানে আমার পরে যিনি আসবেন এ দায়িত্বে, আমি আমার উপলব্ধিটা উনাকে দিয়ে যাব। উনি যদি ফিল করেন যে, এখান থেকে উনার নেওয়ার মতো কিছু আছে, তাহলে উনি নেবেন।

শিশুদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি নির্মাণে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কীনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এখন বললেই বলা হবে যে, গত ১৫ বছরের কথা বলা হচ্ছে। এতদিন আমরা শুধুমাত্র পাসের হার বাড়িয়েছি, আমরা শুধু দেখেছি কতজন জিপিএ ৫ পায়। যখন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলি, টের পাই, আমাদের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ফাউন্ডেশন ভয়াবহভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এটা ঠিক করার জন্য সময় লাগবে। কাজ শুরু করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং তথ্য উপদেষ্টার সাথে কয়েকবার আলোচনা করেছি। তাদের সঙ্গে ‘নতুন কুঁড়ি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক সময় নতুন কুঁড়ি ক্রেজ তৈরি করেছিল। এটা চালু হলে একটা প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, আর স্কুলের কারিকুলাম একটা মেজর জিনিস। আমরা তো অল্প কদিনের সরকার। নির্বাচিত সরকার আসলে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে টোটালি তাকানোর সময় আসবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটার কাজ কী এবং আমরা ইউনিভার্সিটি থেকে কী প্রডিউস করতে চাই, এটা মাথায় রেখে পুরো ব্যবস্থা নতুন ডিজাইন করার সময় চলে এসেছে।

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শিল্পকলাগুলো কবে একটা কী কারিকুলাম বানিয়ে দিয়ে গেছে, ওই কারিকুলামের মধ্যেই আমরা আটকে আছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে পাওয়ারফুল হচ্ছে মিউজিক, গান। একেক অঞ্চলে গানের একেকরকম ভ্যারাইটি। আমাদের যে অ্যাসেট আছে, সেটাকে আমরা নিজেরাও ব্যবহার করিনি, বাইরের দুনিয়ায়ও প্রদর্শন করিনি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য মো. সাইদুল আলম খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইনানী থেকে ১৩০০ কিমি পায়ে হেঁটে এভারেস্ট জয়
পরবর্তী নিবন্ধজিয়া স্মৃতি জাদুঘর হবে পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম