জব্বারের বলীখেলায় চন্দনাইশের হাতপাখার ১২ কোটি টাকার ব্যবসা

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | শনিবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে লালদিঘীর মেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চন্দনাইশের তালপাতার হাতপাখার। যুগযুগ ধরে মেলার এক ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে পরিচিত এই হাতপাখা। মেলায় আসা প্রায় প্রত্যেকেই কিনেন হাতপাখা।

এই তালপাতার হাতপাখা তৈরি হয় চন্দনাইশ পৌরসভার জিহস ফকিরপাড়া গ্রামে। এ গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। কারণ এ গ্রামে তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি মজবুত এবং টেকসই হাতপাখা। বানানো হয় তালপাতা ও বেতের সাহায্যে। হাতপাখা তৈরির সাথে জড়িত পাখাশিল্পীদের দেয়া তথ্যমতে প্রতিবছর জব্বারের বলী খেলায় প্রায় ৫ লাখ হাতপাখা বিক্রি হয়। টাকার হিসেবে যার মূল্য দাড়ায় ১২ কোটি টাকারও বেশি।

চৈত্রবৈশাখ মাসে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে তাপদাহ। এ সময় বেড়ে যায় হাতপাখার চাহিদাও। তীব্র গরমে একটু শীতল পরশ পেতে মানুষ হাত বাড়ায় তালপাতার হাতপাখার দিকে। বর্তমান যুগে এসেও এ হাতপাখার কদর একটুও কমেনি। বরং এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শুধু জব্বারের বলীখেলা নয়, সারাবছর এখানকার হাতপাখার কদর থাকে। এ গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই তৈরি করতে পারেন হাতপাখা। প্রতিটি হাতপাখা দুইশ থেকে থেকে সাড়ে তিনশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গড় হিসেবে প্রতিটি হাতপাখা আড়াইশ টাকার বেশি।

ঐতিহ্যবাহী চন্দনাইশের জিহস ফকিরপাড়ার হাতপাখা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাতপাখা তৈরির কাজে সকল বয়সের নারী, পুরুষ, যুবক, যুবতী এমনকি শিশু কিশোররাও ব্যস্ত। গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার হাতপাখা তৈরির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, আধ্যাত্মিক সাধক জিহস ফকিরের নামানুসারে এ গ্রামটিকে জিহস ফকিরপাড়া হিসাবে নামকরণ করা হলেও বর্তমানে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে পাখাগ্রাম হিসেবে।

জিহস ফকিরপাড়া গ্রামের পাখাশিল্পী বিদেশ ফেরত মো. ফোরকান (৫৬) জানান, তিনি পহেলা বৈশাখের আগেই ১ হাজারের অধিক হাতপাখা পাইকারদের নিকট বিক্রি করেছেন। জব্বারের বলী খেলায় আরো হাজারখানেক পাখা প্রস্তুত করে বিক্রির জন্য নিয়ে গেছেন। তিনি জানান, শুধু জব্বারের বলী খেলায় নয়, এখানকার হাতপাখার বিশাল বাজার রয়েছে আনোয়ারা সরকার হাটের খেলায়, আনোয়ারার বড় উঠান ‘মিয়ার খেলা’, সাতকানিয়ার ‘মক্কার বলী খেলায়’। এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাইজভান্ডার ওরশ শরীফ ও আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ার বার্ষিক ওরশ শরীফ, পহেলা বৈশাখ ও দেশের বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা, বলী খেলা, গরুর লড়াই ইত্যাদি মেলায় হাজার হাজার হাতপাখা বিক্রি হয়।

একসময় এ গ্রামের আবদুল মোনাফ বানাতেন প্রচুর তালপাতার হাতপাখা। বর্তমানে তিনি প্রবাসী। মূলত হাতপাখা বিক্রির টাকায় তিনি পাড়ি দিয়েছেন প্রবাসে। বিগত ২ মাস আগে তিনি এসেছেন গ্রামে। নিজেই তৈরি করেছেন ১০০ হাতপাখা। বিক্রি করবেন জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদিঘীর মেলায়। তিনি প্রতিটি হাতপাখা বিক্রি করবেন ৩০০ টাকা ধরে।

পাখাশিল্পী মো. সোলাইমান জানান, শতাধিক বছর আগে থেকে তাদের পূর্ব পুরুষরা এ হাতপাখা তৈরির কলাকৌশল রপ্ত করেন। এরপর থেকে যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে স্বগৌরবে চলছে হাতপাখার ব্যবসা। তিনি জানান, ৭ তারী, ৯ তারী, ১১ তারী, ১৩ তারী ও ১৫ তারীর হাতপাখা তৈরি করেন এখানকার পাখা শিল্পীরা। এরমধ্যে ৯ এবং ১১ তারি পাখার চাহিদা থাকে বেশি। চাহিদা সম্পন্ন হাতপাখাগুলো তালগাছের আগার পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়। ফলে এটি মজবুত ও টেকসই হওয়ায় দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। ভবিষ্যতে এ শিল্পটির আরো ব্যাপকতার জন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারিভাবে ঋণ পেলে হাতপাখা বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে রপ্তানি সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই কিছু কিছু হাতপাখা বিদেশে নিয়ে যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকী নেই জব্বারের বলীখেলা ঘিরে বৈশাখী মেলায়
পরবর্তী নিবন্ধইলিয়াস কাঞ্চন-শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে জনতা পার্টি বাংলাদেশ