১ম পর্ব
২০২০ সালে ফেলিনির জন্ম শতবর্ষ আশানুরূপভাবে উদযাপিত হতে পারেনি করোনাজনিত কারণে। ফেলিনির জন্মভূমি ইতালি ছিল কোভিড ১৯-এ ভয়ংকররূপে বিপর্যস্ত। পরিস্থিতি এখনো নাজুক
ফেদেরিকো ফেলিনি ১৯৯৩ সালে সারাজীবনের চলচ্চিত্র কর্মের সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ অস্কারের লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান। আর তার থেকেই তাঁর দিনগুলি কাটছিল চরম অসুস্থতায়। শেষ পর্যন্ত তিনি চলে যান কোমায়। দু’সপ্তাহ অবিরত অজ্ঞান থাকার পর ১৯৯৩ সালের ৩১ অক্টোবর তাঁর প্রিয় শহর রোমে জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটি রেখে যান।
কিংবদন্তী অভিধাটি সর্বার্থেই সুপ্রযোজ্য ফেলিনির ক্ষেত্রে। কেননা ফেলিনির দেশ ইতালি বিশ্ব চলচ্চিত্রকে উপহার দিয়েছে নিও রিয়ালিজমের মতো যুগান্তকারী চলচ্চিত্র আন্দোলন। আবার বিপ্রতীপে উপহার দিয়েছে গ্ল্যামারাস স্টার সিস্টেম। উপহার দিয়েছে প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব ভেনিসে। উপহার দিয়েছে বিশ্ব সেরা চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, অভিনয় শিল্পী। সর্বোপরি বিশ্বসেরা অনেক অনেক চলচ্চিত্র তবুও ইতালির চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে উঠে আসে ফেদেরিকো ফেলিনির নাম। উঠে আসে ‘লা দোলচে ভিতা’ ‘লাস্ত্রাদা’ ‘এইট এন্ড হাফ’, ‘অ্যামারকর্ড’-এসব ছবির প্রসঙ্গ।
চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবস্থানটি ছিল সুদীর্ঘ কালের। দশকের পর দশক ধরে তিনি ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তী। মাত্র ৭২ বছরের জীবনে নির্মাণ করেছেন ৩০ টির মতো ছবি, যার প্রায় সবগুলিই চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ৭২ বছরের জীবনে ফিল্ম ক্যারিয়ার ৪০ বছরের (১৯৫২-১৯৯২)।
১৯৯৩ সালের ৩১ অক্টোবর ফেলিনি যখন তাঁর প্রিয় শহর রোমে প্রয়াত হলেন দীর্ঘ দু’সপ্তাহ কোমায় আচ্ছন্ন থাকার পর, তার পরের দিন রোমের বিখ্যাত পত্রিকা লা স্তাম্পা মন্তব্য করেছিল, ‘ফেলিনি ছাড়া বেঁচে থাকা সত্যিই কঠিন। এরকম অসাধারণ একজন মানুষ, এরকম একজন জিনিয়াস ছাড়া বেঁচে থাকা সত্যিই কষ্টকর।’ সত্যিই তাই চলচ্চিত্রের এই জাদুকরকে ছাড়া চলচ্চিত্রের কথা ভাবাই যায় না। এই ভাবনা গত ২৭ বছরে এতটুকু ম্লান হয়নি। বরং ফেদেরিকো ফেলিনি পরবর্তী প্রজন্মের চলচ্চিত্রানুরাগীদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছেন।
এই ফিল্ম মায়েস্ত্রোর জন্ম ১৯২০ সালের ২০ জানুয়ারি ইতালির সৈকত নগরী রিমিনিতে। ফেলিনির জন্মভূমি ইতালি ধারণ করে আছে প্রাচীন রোমান সভ্যতাকে। বিশ্ব সংস্কৃতিতে ইতালির রয়েছে গৌরবজনক অবদান। সেই স্বর্ণভূমির সুবর্ণ সন্তান ফেদেরিকো ফেলিনি, যাঁকে চলচ্চিত্রের রূপ কথাকার বলে অভিহিত করেছেন অনেকে, শেষ কর্মক্ষম দিনটি পর্যন্ত চলচ্চিত্রের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।
ফেদেরিকো ফেলিনি অবিরত ছুটে বেড়িয়েছেন নতুনত্বের সোনার হরিণের পেছনে। ধরেছেনও। নিজের গড়া নিয়মকে ভেঙেছেন। আবার গড়েছেন নতুন রীতি। নির্মাণ করেছেন নতুন শৈলী। আর ভাঙাগড়ার এই খেলায় চলচ্চিত্র শিল্প বারেবারে লাভবান হয়েছে। পেয়েছে নতুন নতুন বাঁকের দিশা। আর সেই বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন আপন অভীষ্ঠে নিজেকে এক কিংবদন্তিতে পরিণত করে।
ফেলিনিকে অনেকে বলেছেন চ্যাপলিনের ভাবশিষ্য। চ্যাপলিনের মতো ফেলিনিও আমাদের সমাজের অসঙ্গতি আর অসারতাকে তুলে ধরেছেন কৌতুকাবহে। তবে আঙ্গিক শৈলীর ভিন্নতায়।
ফেলিনির কর্মজীবনের শুরুটাও ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। সাংবাদিক, গীতিকার, কার্টুনিস্ট, স্কেচশিল্পী এবং একজন ক্যারিকেচারিস্ট হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু এবং শেষোক্ত ক্ষেত্রেই তাঁর পারঙ্গমতা দৃষ্টি আর্কষণ করে সকলে। কৌতুকজ্ঞান ছিল ফেলিনির সহজাত এবং যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত।
১৯৩৯ সালে তিনি পুরোপুরি সম্পৃক্ত হন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। সহকারী চিত্রনাট্যকার হিসেবে ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন। মূলত কাজ করেন ইতালির চলচ্চিত্রের অন্যতম দিকপাল রবার্তো রোজেলিনির সাথে। রোজেলিনির রোমা, সিটা অপেরটা (রোমা, ওপেন সিটি) ও পাইসা ছবির সহকারী চিত্রনাট্যকার ছিলেন ফেলিনি। রোজেলিনির ল’ আমুর ছবির ‘ইন মিরাকোলো’ পর্বে ফেলিনি বিখ্যাত অভিনেত্রী আনা ম্যাগনানির বিপরীতে সফল অভিনয়ও করেছিলেন ১৯৪৮ সালে।