বাঙালি হিন্দু সমপ্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উৎসব। শব্দে ‘কোমলতা’, ধ্বনিতে ‘মমতার মায়া’। ঢাকে কাঠি, ধূপ সুগন্ধ, শরৎ শিউলি নাচে, বাতাসে সুর ‘জগদ্ধাত্রী আগমন’। সকলের মিলন মেলায় ‘সর্বজনীন’। মা’কে পৃথিবীতে সাজ সজ্জায় বরণ করতে ভক্ত সন্তানদের ব্যাকুলতা। মাতৃত্বে নারী শক্তি- সাহসী, মমতাময়ী, সহ্য ও ধর্য্যের অধিকারী। সন্তানের প্রতিকূলতা, অনুকূল রূপান্তরিতে একমাত্র অধিনায়ক। সনাতন ধর্ম কিংবা গোড়াপত্তন হতে আজ অবধি নারী শক্তির খেলা ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রতিফলিত। জাতিগত মাতৃকেন্দ্রিক পরিবার উল্লেখ্য, কিন্তু পুরুষের শারীরিক সক্ষমতাতে অবহেলিত। পদে পদে নানা বিপদে পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিত। সৃষ্টিতে নারীতেই পুরুষ জন্ম। নারীর রূপ, গুণ ক্ষমতা অতুলনীয়। জন্মদাত্রীকে অবহেলা, নির্যাতন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর রাস্তায় রেখে জগদ্ধাত্রীকে কয়েক দিন ভালোবাসা দিয়ে আভিজাত্য সাজ সজ্জায় বরণ করায় কি মাতৃভক্তি? জন্মদাত্রী সন্তানের কষ্ট দেখে জগদ্ধাত্রী কখনো খুশি থাকতে পারে না। জন্মদাত্রী শুধু দিতে জানে, নিতে কিছু নয়। মা দুর্গা প্রতিবছরই জানান দেয়, নারীকে সম্মান ও রক্ষা করো, ভিন্ন রূপে ভিন্ন ভাবে। পুজোতে যতটা অর্থ ও ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়া হয় তার অর্ধেক পরিমাণ যদি ধরিত্রীর প্রতিটি জন্মদাত্রী ও অসহায়রা পেয়ে থাকতো তাহলে মা দূর্গা তৃপ্ত হয়ে পৃথিবী শান্তিতে ভরিয়ে দিত। এক মা সাজ সজ্জায়, রাজভোগে, রাজকীয় মঞ্চে বসে হাসে, আরেক মা ছেড়া বস্ত্রে, অনাহারে, রাস্তায় বসে সন্তানের জন্য কাঁদে। জন্মদাত্রীই জগদ্ধাত্রীর আরেক রূপ। মাকে খুশি রেখে সুখী করলেই জগদ্ধাত্রী তৃপ্ত হবেন। নতুবা ‘করোনা’ ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রতিবছরই হানা দেবে পৃথিবীর বিবেক মূর্খ ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার জন্য। তাই পুজোতে এবার প্রার্থনা হোক, অর্থ কষ্টে হোক কিংবা অর্থ সুখে ধরিত্রীর প্রতিটি বৃদ্ধ জন্মদাত্রী যেনো সন্তান ভালোবাসার নীড়ে আনন্দে থাকুক। মূর্খ পুরুষের বিবেক হীনতায় এক নারী দ্বারা বৃদ্ধ নারী গৃহ ত্যাগ হলে, তার প্রতিফল একই। অর্থ শক্তি ‘সমুদ্র’ হলে, মাতৃ শক্তি ‘পৃথিবী’।