জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিন

| বৃহস্পতিবার , ১১ জুলাই, ২০২৪ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠন বিশ্ববাসীকে শিশু, কিশোরকিশোরী, তরুণ প্রজন্ম, সক্ষম দম্পতি, তাদের ছোট পরিবার গঠন, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশুমৃত্যু রোধে স্বাস্থ্যসেবা, বাল্যবিবাহ না হওয়া, সহিংসতা, বৈষম্য ও মানবাধিকার নিয়ে প্রকৃতিপরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে এ দিবস গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উদযাপন করে আসছে। বাণী দিয়ে আসছে নানা সচেতনতামূলক। অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম উদ্দেশ্য, বিশ্বে যেন জনবিস্ফোরণ না ঘটে। যেন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান বিশ্বে প্রতি ১০ থেকে ১৫ বছরে ১০০ কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়েছে ১৯৮৭ সাল থেকে। তখন বিশ্বে জনসংখ্যা ছিল ৫০০ কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ প্রবণতায় ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যার যে চিত্রটি দাঁড়াবে, তা হিসাব করে জনমিতিবিদরা উদ্বেগের সঙ্গে বলেছেনহয়তো একটা পৃথিবীতে এত মানুষের তখন সংকুলান হবে না। প্রয়োজন হবে আরও তিনটি পৃথিবীর। তাহলে পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল বাংলাদেশের কী অবস্থা দাঁড়াবে ২০৫০ সালে! যে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ১৫ জন মানুষ বসবাস করছে, সেখানে কোটি কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে তখন আমাদের কী হবেসেটা ভাববার বিষয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস) ২০২৩’এর ফল প্রকাশ করেছে সমপ্রতি। এর তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার হয়েছে। ২০২২ সালে ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে নারী আট কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার ও পুরুষ আট কোটি ৪২ লাখ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ছিল ৬৩.৩ শতাংশ, যা পরের বছরে কমে গেছে। ২০২৩ সালে ওই হার হয়েছে ৬২.১ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শহরগ্রাম উভয় এলাকায়ই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহাকারী কমেছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে কমেছে বেশি। কিন্তু তার পরও দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২৩ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ছিল ১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০ শতাংশ। বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস থেকে কিছু ইতিবাচক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, ২০২৩ সালে দেশে তালাকের প্রবণতা কমেছে। দাম্পত্য বিচ্ছেদের হারও কমেছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে অসংখ্য দেশ রয়েছে, যেগুলো আয়তনে বিশাল হলেও জনসংখ্যায় আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের যুবদের সংখ্যাও ইউরোপের অনেক উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে ঢের বেশি। অথচ মাথাপিছু আয়, সেবার মান প্রভৃতিতে বাংলাদেশের চেয়ে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়। মূলত তারুণ্যনির্ভর জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে দুর্বল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত এবং প্রশিক্ষণের অভাবকে। আজকের এ বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই সময়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমছে না। কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষায় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনবল সরবরাহে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারগণ ব্যর্থতা ও হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় চেষ্টা ও সংগ্রামে বিফল হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে আত্মনিয়োগ করছে, যা কেবল তার নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। এমতাবস্থায় করণীয় হচ্ছে, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখনো একটি বড় সমস্যা। কেননা এখানকার জনঘনত্বের হার সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে ঘাটতি আমাদের আর্থসামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বেকারত্ব; দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও অশিক্ষার শিকার হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। একটি দেশে জনসংখ্যা তখনই সম্পদে পরিণত হয়, যখন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যায়। কিন্তু এ চাহিদাগুলো পূরণে এখনো বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকল্পনার অভাবে পুরো জনসংখ্যাকে কার্যকর জনসম্পদে পরিণত করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দেখা দিয়েছে বৈষম্য। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে এ ঘাটতিগুলো পূরণ করতে হবে। জনসংখ্যাকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রেখে বিদ্যমান সম্পদের পরিবেশবান্ধব ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে