ধীরে ধীরে ফিরছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কঠোর বিধিনিষেধ বা ‘লকডাউন’-এর মধ্যেই রোববার থেকে শর্তসাপেক্ষে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সরকারকে। দৈনিক আজাদী পত্রিকায় সোমবার প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ‘সীমিত পরিসরে মার্কেট খোলার প্রথমদিন নগরীর অধিকাংশ মার্কেটে ক্রেতার অপেক্ষায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণার সাথে বন্ধ হয়ে যায় সব মার্কেট। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনের হুমকি দিলে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যেই মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। তবে গণপরিবহন না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা মার্কেটমুখী হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে অনেক মার্কেটে ক্রেতা বিক্রেতাদের সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেককে শপিং ব্যাগের পাশাপাশি মাস্কও হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। আবার কিছু কিছু বিক্রেতাকে মাস্ক মুখে না দিয়ে কানের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।’
যদি নিজেরা মাস্ক ব্যবহার না করি, তাহলে নিজে তো আক্রান্ত হবোই, পাশাপাশি অন্যকেও আক্রান্ত করবো-এই বোধটুকু না আসলে তো হবে না। উল্লেখ্য, সরকারের স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করে শপিংমল ও দোকান পরিচালনা করতে অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। শপিংমল ও দোকানে আসা সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন এরকম একজন ব্যক্তির কারণে বহু মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান মহামারি থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অন্যকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা; আর এ বিষয়ে কেউ অসহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া। আমাদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য। সোমবার আজাদীর ফেসবুক বিভাগে প্রতিমা দাশের একটা মতামত প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তিনি বলছেন, ‘শপিং মল খুলে দিক, কিন্তু আমাদের বেরোনো একদম বন্ধ করে দিতে হবে। যদি টুকটাক সামান্য কেনাকাটা করতে হয় তাহলে সেটা অনলাইন কিংবা যেখানে ১০ জনের বেশি মানুষ নেই সেখান থেকে কিনে নিলে ভালো হবে। সামনে যেহেতু আমাদের ঈদের উৎসব, তাই এবছর আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশীর বাড়ি যাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং এই সময় নিজের বাড়িতেও আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ করতে হবে। ঈদ মোবারক, ঈদের শুভেচ্ছা দিতে হলে মোবাইলে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আমরা শুভেচ্ছা জানাবো। যেখানে ভিড় বেশি বা কুড়ি জনের বেশি লোক জমায়েত হয়েছে সে জায়গাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, হোক সেটা শপিং মল বা ধর্মীয় স্থান। ঘরে যা আছে স্বাভাবিক খাবার খেয়ে দিন কাটিয়ে দেবো, বিরিয়ানি রান্না করার জন্য মশলাপাতি কিনতে না বেরোনোই দরকার। বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভালো ভালো খাবার রান্না করে খাওয়া যাবে।’
এভাবে যদি নিজে সচেতন থাকি এবং অন্যকে সচেতন করে তুলি, তাহলে আমরা অনেক কঠিন সময় অতিবাহিত করতে পারবো নির্দ্বিধায়। শর্তসাপেক্ষে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার খবরে সাধারণ মানুষের ভেতর যে চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে, তাতে শংকিত না হয়ে পারা যাচ্ছে না। গণপরিবহন চলা শুরু হলে ক্রেতার সমাগম বাড়বে-তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করা, কাজে যোগ দেওয়া, অফিস করা, ব্যাংকে যাওয়া, বাজার করা প্রভৃতি বিষয়কে মাথায় রেখে এমনভাবে চলাচল করা উচিত, যাতে নিজে কখনো ঝুঁকিতে না পড়ি। মনে রাখতে হবে, একজন আক্রান্ত হওয়া মানে তাঁর পরিবারের সদস্যকে ঝুঁকিতে রাখা। নিজের ভালো নিজেকেই বুঝতে হবে। বারবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতর্ক করছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে। এখন থেকে যদি সতর্ক ও সচেতন না হই, তাহলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে আমাদের। সামনে আসছে ঈদ। ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের ঢল না নামে রাস্তায়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। জনজীবন কতটা স্বাভাবিক থাকবে, তার বিবেচনার আগে ভাবতে হবে কতটা ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।