মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ মো. রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেবেন আগামীকাল। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি এবং নির্বাচিত কাউন্সিলররা শপথ নিয়েছেন। গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরদিকে নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করা- এটাই যেন লক্ষ্য হয়। নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে ভার্চুয়ালি শপথ পাঠ করানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তার সুফল ইতোমধ্যে মানুষ পেতে শুরু করেছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত শুক্রবার দুপুরে মেয়র রেজাউল করিম গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত ও মুনাজাত শেষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। সেখানে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আমার কার্যদিবসের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে বেশ কিছু জরুরি সেবামূলক কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করার কৌশল নির্ধারিত করেছি। আশা করি চট্টগ্রাম নগরবাসী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবেন।
আসলে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ নতুন নয়, পুরনো। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নগরীর জলাবদ্ধতা ও উন্নয়নকাজের সমন্বয়হীনতা। রেজাউল করিমের একাধিক পূর্বসূরিও একই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন, কিন্তু কেউই নগরবাসীর প্রত্যাশার সঙ্গে পেরে ওঠেননি। নগরবাসী বলছে, এর বাইরেও আরো কিছু বিষয়ে নতুন মেয়রকে কাজ করতে হবে। যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, যানজট, মানসম্মত স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১২ বছরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। আছে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি আরো অনেক প্রকল্প। চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা দূর করতে বর্তমান সরকার চারটি প্রকল্পে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু এখনো জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চসিকে সমস্যা আর সংকটের অন্ত নেই। সংস্থাটির এখন অন্যতম সংকট অর্থ। একে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড বকেয়া আছে কয়েক শ’ কোটি। তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক বাবদ বকেয়াও প্রচুর। পত্রপত্রিকায় চসিকের সাতটি বিভাগের বিশৃঙ্খলার কথা প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজস্ব বিভাগের ১২৮ জনসহ তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছিলেন। অভিন্ন চিত্র স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন বিভাগে। কর্মরতদের অনিয়ম ও যথাসময়ে অফিস না করাসহ নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি মেয়রকে সহযোগিতা না করেন, তাহলে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে অন্তরায় হয়ে দেখা দেবে এই অসহযোগিতা। এ সব বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিমকে হতে হবে নির্মোহ ও কঠোর। এর বাইরে মেয়রের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক। তাঁরা আগামীতে চট্টগ্রামকে একটি সুন্দর, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য প্রত্যাশা করেন। চট্টগ্রাম আধুনিক নগরে রূপান্তরিত হবে -সেটাই তাঁরা প্রত্যাশা করেন।
জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ১শ দিনের যে কৌশল রেজাউল করিম চৌধুরী নির্ধারিত করেছেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেগাপ্রকল্পগুলোতে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস কম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। সব কাজে এমন সমন্বয় দরকার। সমন্বয়হীনতা দূর করে সব সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন মেয়র কাজ করলে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়া সম্ভব।