চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হোক এই হাসপাতাল। যাতে প্রত্যেকেই মনে করতে পারেন যে এটি আমার হাসপাতাল, আমাদের হাসপাতাল। তিনি ক্যান্সারের মতো একটি কঠিন রোগের চিকিৎসায় এই হাসপাতালটি অদূর ভবিষ্যতে মানুষের আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা কেবল একজন ব্যক্তিকেই শেষ করে না, একটি পরিবারকেও নিঃশেষ করে। আমরা চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের ভরসার জায়গায় পৌঁছতে চাই। আমরা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। একজন মানুষের জীবনেও যদি হাসি ফোটানো যায় তাতে আমরা অন্যরকমের শান্তি পাবো। যা আমাদের জীবনে অনন্য হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ক্যান্সার আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমরা এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের এই উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। শুধু দেশের নয় প্রবাসীদের অনেকেই আমাদের সহায়তা করেছে। আমরা জনগণের সহযোগিতায় জনগণের জন্যই হাসপাতালটি গড়ে তুলতে চাই। গতকাল বুধবার তিনি ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ইউসিবিএল-এর পক্ষ থেকে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ভূমিমন্ত্রীর প্রতি বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগে অনুদান সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের জাবেদ যদি চান তাহলে অন্তত বিশটি ব্যাংক থেকেও যদি পাঁচ কোটি টাকা করে এনে দেন তাহলে আমাদের হাসপাতাল হয়ে যায়। প্রতিটি ব্যাংকেরই সিএসআর ফান্ড রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এম এ মালেক।
এম এ মালেক ভবন নির্মাণে চট্টগ্রামের খ্যাতনামা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল দায়িত্ব পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্যান্সার হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য জন্য সিপিডিএল প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসাইনকে অনুরোধ জানান।
এম এ মালেক চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, করোনাকালে এই হাসপাতালটি যেভাবে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা অতুলনীয়। তিনি মা ও শিশু হাসপাতালের সর্বস্তরের কর্মকর্তা এবং ডাক্তার নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চট্টগ্রামের মানুষের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী ও কার্যনির্বাহী কমিটির ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব। এতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, মো. আহছান উল্যাহ, এস এম কুতুব উদ্দিন, মো. হারুন ইউছুপ, এম জাকির হোসেন তালুকদার, খায়েজ আহমেদ ভুঁইয়া, মোহাম্মদ সাগির, সিপিডিএল প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসাইন, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার বড়ুয়া, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক, প্রধান প্রকৌশলী অনুরুপ চৌধুরী, উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, ডা. এ কে এম আশরাফুল করিম, ডা. আবু সৈয়দ চৌধুরী, এনেসথেসিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অলক নন্দী, অনকোলজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহান, ফার্মাকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রোজিনা হক, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নাহিদ সুলতানা, শিশু আইসিইউর সহকারী অধ্যাপক (চ.দা) ডা. ফাহিম হাসান রেজা, নার্সিং কলেজের প্রিন্সিপাল স্মৃতি রাণী ঘোষ, নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ঝিনু রাণী দাশ, নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট রনজু কনা পাল প্রমুখ।
বিশেষ অতিথি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, এই ক্যান্সার হাসপাতাল একটি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এই হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। তিনি চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণকে এই হাসপাতাল নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান।
সিপিডিএল প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে নয় সেবার উদ্দেশে এই কাজটিতে অংশ নিয়েছি। আমরা মা ও শিশু হাসপাতালের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চাই। ইঞ্জিনিয়ারিং পার্টনার হিসেবে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতেও যেকোন কাজে সিপিডিএল চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেন ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি সিপিডিএলকে হাসপাতালের সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তিনটি গেইট নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।