একাত্তরের এদিনে একদিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় আন্দোলিত সারাদেশ, অন্যদিকে পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে দেশি–বিদেশি সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আলোচনা শেষ হয়ে যায়নি। তবে পরবর্তী বৈঠকের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু নিজের বাসভবনে গেলে একজন সাংবাদিক জানতে চান বৈঠক সংক্ষিপ্ত হলো কেন। জবাবে বঙ্গবন্ধু মৃদু হাসেন। আরেক বিদেশি সাংবাদিক বলেন, ‘এই হাসি থেকে আমরা কী কিছু অনুমান করে নিতে পারি?’ জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনার মুখেওতো মৃদু হাসি। আমি জাহান্নামে বসেও হাসতে পারি।’ ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বঙ্গবন্ধু সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিতো বলেছি নরকে বসেও আমার চিত্তে সুখের অভাব হবে না। আমার চেয়ে বেশি সুখী আর কে আছে? সাত কোটি মানুষ আজ আমার পেছনে পাহাড়ের মতো অটল। আমার জনগণ যা দিয়েছে তার তুলনা নেই।’
এ দিন ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। এ নিয়ে এ দিন কোনো অনুষ্ঠান না হলেও সারাদেশের মানুষ দিনটি উদযাপন করেছে ভিন্নভাবে। জন্মদিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার জন্মদিনই কী আর মৃত্যুদিনই কী, আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। আপনারা আমার জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোন মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে।’
সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের ভাসানী বলেন, ‘পূর্ববাংলা এখন স্বাধীন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এখন স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। আমার ৮৯ বছরের অতীতের সবকটি আন্দোলনের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম। কিন্তু একটি সর্বজনীন দাবিতে জনগণের মধ্যে বর্তমান সময়ের মত একতা ও সহযোগিতা আমি এর আগে কখনও দেখিনি।’ অসহযোগ আন্দোলনের দিবসটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ছাত্র–ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানসহ বিভিন্ন এলাকায় কুচকাওয়াজ ও রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করেন।