জনগণকে সম্পৃক্ত করে অপরাধ নির্মূলের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

| সোমবার , ৩ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

আইনবিদদের মতে, ‘অপরাধ এমন কাজ, যা আইন বহির্ভূত বা আইন পরিপন্থী। যা সম্পাদনের ফলে রাষ্ট্র সেই অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। অপরাধ সেই ধরনের কাজ, যা আমাদের সমাজব্যবস্থায় অনেকাংশে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলছে।’ বর্তমানে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে, যা নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করছে। অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরাধ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরাধের ধরনেও পরিবর্তন আসছে। সেই সাথে অপরাধীরাও তাদের অপরাধ সংঘটনের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘হঠাৎ ধনী হতে গিয়ে বাড়ছে নানা অপরাধ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সবাই বড়লোক হতে চায়। বড়লোক মানে মানুষ হিসেবে বড় নয়, টাকার হিসেবে বড়। কেউ কেউ পরিশ্রম করে সেই জায়গায় পৌঁছায়, তবে বেশির ভাগের ধৈর্যশক্তি অত নেই। তারা খোঁজে শর্টকাট রাস্তা। কেউ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, কেউ ভণ্ড সাধু সন্ন্যাসীর বেশ ধরে, কেউ টোটকা ওষুধের রাস্তা খোঁজে, কেউ জিনের বাদশা সাজে। মোদ্দাকথা, ‘ধান্দার খাতায় নাম লেখায়’। আমরা সবাই কমবেশি ধান্দা খুঁজি। অল্প সময়ে যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তারা সব থেকে বড় ধান্দাবাজ। বড়লোক হওয়ার একশ একটা উপায় আছে। সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র নানা কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হচ্ছে। এ ধরনের প্রতারক চক্রের গডফাদার ও সদস্যরা গ্রেপ্তারও হচ্ছে। এরপরও থামছে না প্রতারণা। প্রতারক চক্রকে ধরতে পুলিশ র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারণা মামলার ক্ষেত্রে দুর্বলতা, পুলিশের গ্রেপ্তার ছাড়া অন্য কোন কর্তৃত্ব থাকে না। প্রতারক চক্র শক্তিশালী। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতারণা করে। প্রতারক চক্র নানা কৌশলে প্রতারণা করে বা অন্যকে ঠকিয়ে অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হচ্ছে। দেশে নৈতিক শিক্ষার অভাবে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাভবান হচ্ছে। আর ভিকটিম (প্রতারিত) পক্ষ দুর্বল (সহজ সরল) হওয়ায় অনেক সময় কর্তৃপক্ষ নিয়ে টানাটানি হয়। এছাড়াও বহু মানুষ লোভে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে যে অপরাধ ঘটে তার বেশির ভাগ ঘটনা মামলা পর্যন্ত গড়ায় না। ভুক্তভোগীরা মামলা করে আবার ঝামেলায় জড়াতে চান না। কারণ বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর ধারণা মামলা করে প্রতিকার পাওয়া যাবে না। তারপরও কিছু ঘটনার পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এতে দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, মাদক কারবার, চুরি, চোরাচালান, ডাকাতি ও সাইবার অপরাধসহ নানা ধরনের অপরাধ। প্রতি মাসে অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কার্যক্রমের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে অপরাধ রোধে আইনি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেশি কার্যকর বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান তাঁর এক লেখায় বলেছেন, বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে উত্তরণ করা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ বাস্তবায়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প, পুরো দেশকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা, ইন্টারনেট সুবিধা ফোরজি থেকে ফাইভজির আওতায় আনা ইত্যাদি বহু উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আমাদের সমাজের মানুষের মধ্যে যেভাবে নৈতিকতার অবক্ষয় ও সুবিধাভোগের মানসিকতার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তার ফলাফল হিসেবে অপরাধ ও নৃশংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে নিকট ভবিষ্যতে এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে প্রতীয়মান হবে।
একটি সমাজ থেকে অপরাধ কোনোভাবেই নির্মূল করা সম্ভব নয়, প্রাচীনযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়ে আসছে। কিন্তু অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অবশ্যই সম্ভব। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত এদেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আরও তৎপর ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা। একই সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করে অপরাধ নির্মূলের জন্য উদ্যোগ তৈরি করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে