দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা আগামী দিনের গণতন্ত্রের পথে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এই নির্বাচনকে কেউ বানচাল করতে পারবে না। এ সময় গণতন্ত্রের পথ কেউ যাতে রুদ্ধ করতে না পারে সেজন্য সকলকে চোখ–কান খোলা রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ধরনের উসকানিতে ও কোনো ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাব।
গতকাল শনিবার নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’–এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জনগণকে বাইরে রেখে দেশকে জিম্মি করে কারো স্বার্থ আদায় করতে দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে খসরু বলেন, যারা সেদিকে পাঁয়তারা করছে তাদের একটু সাবধান হতে হবে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যে গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সবাই এত ত্যাগ স্বীকার করেছি সেই গণতন্ত্র যাতে কারো হাতে জিম্মি হয়ে না পড়ে। সেই গণতন্ত্র যেন কেউ জিম্মি করতে না পারে। এ রকম একটি লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে কারো স্বার্থ, কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ আদায় করা সম্ভব হবে না। কারো যদি তাদের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি থাকে, দেশকে নিয়ে তাদের ভাবনা ও দর্শন থাকে তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে।
তিনি বলেন, তরুণদের বলছি আপনারা সেদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আপনারা লড়াই করেছেন বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের মানুষের সব অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।
আমীর খসরু বলেন, যে অধিকারের জন্য গত ১০–১৫ বছর ধরে এতগুলো প্রাণ দিয়েছে। গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন ও গুম হয়েছেন, ষাট–সত্তর লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা পুলিশি হেফাজতে এবং জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, মাঠে–ঘাটে, ধানক্ষেতে কষ্ট করে থেকেছেন। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আপনারা আন্দোলনকে সফল করেছেন। আপনারা স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছেন।
তিনি বলেন, তামিম ইকবালকে দেখে বলতে ইচ্ছে করছে, আজকে চট্টগ্রামের তরুণ সমাজ ছক্কা মেরে দিয়েছে। বাংলাদেশের আগামী দিনের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তরুণ। তরুণরা, আপনারই বিগত স্বৈরশাসক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের মূল শক্তি ছিলেন। এর কৃতিত্ব চট্টগ্রামের আন্দোলনের, চট্টগ্রামের তরুণদের দিতে হবে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সেদিন বুক পেতে দিয়েছিল গুলির সামনে, প্রাণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল সেদিন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার যেদিন পালিয়ে গেছে সেদিন বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তনের ঢেউ আসছে সেটা আমাদের সকলকে ধারণ করতে হবে এবং বুঝতে হবে। সেই নতুন চিন্তায় তারেক রহমানের নেতৃত্বে ৩১ দফার সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা পূরণ করতে হবে।
খসরু বলেন, তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন আগামী দিনে একটি জাতীয় সরকার হবে। যারা আমাদের সাথে রাস্তায় প্রাণ দিয়েছে, জেলে গেছে, গুম–খুন হয়েছে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হবে; সে সরকার ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে। এখানে গোঁজামিলের কোনো কথা নেই, কথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কেউ যদি না বুঝে থাকে তাকে বুঝানো যাবে না। কেউ যদি জেগে থেকে ঘুমের ভান করে তাকে বুঝানো যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা মাঝে মাঝে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শুনি। আসলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তটা হচ্ছে ৩১ দফার মাধ্যমে। ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করবে। সেই ধারণা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আসেনি। সেই বন্দোবস্তের কথা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সাত বছর আগে ভিশন ৩১–এর মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। সেই বন্দোবস্তের কথা তারেক রহমান দুই বছর আগে ২৭ দফার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের সাথে রাস্তায় আন্দোলন করা সকল দলকে নিয়ে ৩১ দফার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরেছি। আমরা ৩১ দফা নিয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছি। আর কোনো দলকে তো তাদের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কোথাও যেতে দেখিনি। জনগণের কাছে যেতে দেখিনি। আগামী নির্বাচনে এই ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা জনগণের ম্যান্ডেট চাইব।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের ঘোষণা–আমাদের সহনশীল হতে হবে। অপরের মতকে শ্রদ্ধা জানাব, তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেও শ্রদ্ধা জানাব। বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে চাই, যে সংস্কৃতি হচ্ছে সকলের সাথে সহাবস্থান, সহনশীলতা। কিন্তু জাতীয় ঐক্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এই জাতির ভবিষ্যৎ আগামী দিনের গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে যাব। জনগণকে বাইরে রেখে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।