সিএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুধী সমাবেশে আইজিপি
আজাদী প্রতিবেদন
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে এই দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ কীভাবে মাথাচাড়া দিয়েছিল, সেটা আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি, দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে এসেছে। আমরা আরও দেখেছি, একসঙ্গে বোমা হামলা করে জঙ্গিবাদের হোলিখেলা হয়েছিল বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছিল; পুলিশ সদস্যদের কারণেই তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি।
গতকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইজিপি বলেন, পুলিশের প্রতিটি সদস্য দেশের সব সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্ব পালনে সবসময় অবিচল থেকেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা লগ্নে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করেছিল। বঙ্গবন্ধু ভবনেও পুলিশ নিজের জীবন দিতে দ্বিধা করেনি। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল বৃদ্ধি, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারই অংশ হিসেবে পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় এক লাখ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বর্ধিত জনবল ও সক্ষমতার কারণে আমরা যেকোনো আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছি। একসময় ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করা কঠিন ছিল। আমরা তথাকথিত সোর্স নির্ভর ছিলাম। আজ পুলিশ দ্রুততম সময়ে ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করছে। প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তির সংশ্লেষ ঘটিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে প্রস্তুত করতে সব ধরনের সহযোগিতা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) করে যাচ্ছেন।
আইজিপি বলেন, দেশে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকার কারণে মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালে আমরা উন্নত–স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট পুলিশ গড়ে তুলতে হবে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ পুলিশকেও স্মার্ট পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দায়িত্ব পালনকালে যে সফলতা অর্জন করেছে এটার জন্য সিংহভাগ সাফল্য দিতে চাই নগরবাসীকে। নগরবাসী সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করেছেন।
এর আগে সভাপতির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সিএমপির বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, রাজধানী ঢাকার পরেই বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অবস্থান। তাই এ নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি করে নগরবাসীর মন থেকে অপরাধভীতি দূর করা এবং কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে জনমনে থাকা পুলিশ ভীতি দূর করার প্রত্যয় আমাদের। জনগণের সম্পৃক্ততায় ও বিভিন্ন সময়োপযোগী কার্যক্রমের মাধ্যমে মাদক নির্মূল ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রের অপতৎপরতাসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা পুরোপুরি সফল–এ দাবি করবো না। তবে পরিসংখ্যান বলছে, বিগত সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য পেশাদারী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করি।
অনুষ্ঠানে সুধী সমাবেশের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আক্তার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, খোরশেদ আলম সুজন, সিএমপির সাবেক তিন কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল, ইকবাল বাহার, মো. মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।