জঙ্গল সলিমপুরের উন্নয়নে হবে অ্যাকশন প্ল্যান

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১২ সেপ্টেম্বর উচ্চ পর্যায়ের সভা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ভূমি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষায় মাঠে নেমেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় উচ্চ পর্যায়ের একটি সভা থেকে জঙ্গল সলিমপুরের উন্নয়নে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হবে। বৈঠকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুরে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বছরের পর বছর ধরে অবৈধ দখলে থাকা ৩ হাজার ১শ একর জমি উদ্ধার করেছে। এসব ভূমির উন্নয়ন এবং এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য এবং পাহাড় রক্ষার্থে গৃহীত উদ্যোগসমূহের পাশাপাশি আরও কী পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসও উপস্থিত থাকবেন। এতে জননিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গ্রাম রক্ষা বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত থাকবেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিদের উক্ত সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন দশক ধরে অবৈধ দখলে থাকা জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। এলাকাটি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর অপতৎপরতা চলে বছরের পর বছর। শহরের কাছে হলেও সীতাকুণ্ড থানার নিয়ন্ত্রণাধীন জঙ্গল সলিমপুর চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন এক জনপদে পরিণত হয়েছিল। নানা বাহিনীর শাসন ও নির্যাতন চলত এখানে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, প্রশাসনের লোকজনও উক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে বাধার সম্মুখীন হতেন। দাগী ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের দেয়া পরিচয়পত্র ছাড়া বাইরের কেউ এলাকায় প্রবেশ করতে পারত না। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ঠেকাতে সার্বক্ষণিক পাহারা বসিয়ে নজরদারি করা হতো। চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা এলাকার বহু পাহাড় ইতোমধ্যে কেটে ফেলেছে। পাহাড় কেটে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করেছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করার মাধ্যমে ভূমিদস্যুদের অনেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এসব অবৈধ প্লটে গড়ে তোলা হয়েছে নানা স্থাপনা। এতে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগও দেয়া হয়েছে।
পুরো বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর সিরিজ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। তাদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, আমরা জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বেহাত হয়ে যাওয়া প্রায় ৩ হাজার ১শ একর খাস জমি উদ্ধার করেছি। বেহাত হওয়া খাস জমি ভূমিদস্যুরা সাধারণ মানুষের কাছে প্লট করে দখলস্বত্ব বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে এবং কয়েকজন কারাগারেও আছেন।
তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুরের উদ্ধারকৃত ৩ হাজার ১শ একর খাস জমির বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। সেজন্যই পাহাড় ও বন রক্ষা করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য আনয়ন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় সবুজায়নের মাধ্যমে কীভাবে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় তার একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে। সরকারের গৃহীত মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে জঙ্গল সলিমপুরে অন্ধকার যুগের অবসান হতে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনালা সংস্কার করলে সাদিয়ার মৃত্যু এড়ানো যেত
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থ আত্মসাত মামলায় যুবলীগ নেতার কারাদণ্ড ১০ লাখ টাকা জরিমানা