জঙ্গলে ৫০ ফুট গভীর গর্তে এনজিও ম্যানেজারের কঙ্কাল

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২০ নভেম্বর, ২০২০ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

অপহরণের এক বছর পর ভূজপুর হেঁয়াকো-বাগান বাজার সীমান্তের নূরপুর এলাকা থেকে ঢাকার এক এনজিও কর্মকর্তার উদ্ধার কঙ্কাল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাহাড়ি দুর্গম ওই এলাকা ৫০ ফুট গভীরে গর্ত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কঙ্কালটি উদ্ধার করা হয়। নিহত এনজিওর ম্যানেজার ও ঢাকার মুগদা মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিনকে (৪৩) ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর তক্ষক বিক্রির নাম করে ফটিকছড়িতে এনে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের তদন্ত কর্মকর্তা আবু হানিফ জানান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গত বুধবার বিকেলে অপহরণের সাথে জড়িত বিল্লাল (৩৫) নামে একজনকে রামগড়-বাগান বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বাগান বাজারের নূরপুর গহীন জঙ্গলে কয়েক মাইল হেঁটে পিবিআই ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, তথাকথিত কোটি টাকা মূল্যের তক্ষক কম মূল্যে বিক্রির লোভ দেখিয়ে গত বছরের ২২ নভেম্বর বাবুল সিকদার (৪২) নামে এক ঠিকাদার ও এনজিও সংস্থা সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে (৪৩) কৌশলে ফটিকছড়ির ভূজপুর হেঁয়াকো-বাগান বাজার সীমান্তের নূরপুরে এনে অপহরণ করা হয়। নিহতের স্ত্রী ঝর্ণা আকতার জানান, তার স্বামীকে তক্ষক বিক্রির নামে কৌশলে হেঁয়াকো বাজারের একটি বোডিংয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে কৌশলে অপহরণ করে আমাদের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের জন্য ৪টি বিকাশ নম্বর দেয়। মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পর ২২ নভেম্বর বাবুল সিকদার মুক্তি পেলেও আমার স্বামীকে তারা হত্যা করে। তখন আমরা ভূজপুর থানা পুলিশের কাছে বারবার সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। তারা আমাদের কখনো রামগড়, কখনো খাগড়াছড়ি, কখনো ঢাকার বাসাবোতে মামলা করতে বলে। হয়তো তখন পুলিশ মৌলিক কাজ করলে আমার স্বামীকে বাঁচানো যেত। দীর্ঘদিন পর পিবিআই গতকাল এক আসামিকে আটকের পর আমার স্বামীকে হত্যার পর নূরপুরের এই গর্তে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন প্রশাসন কঙ্কাল উদ্ধার করেছে। আমরা চাই এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
পিবিআই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘাতক বিল্লালের মাধ্যমে লাশ গুমের স্থান চিহ্নিত হলেও উদ্ধার প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিঘ্ন ঘটায় বিষধর একটি সাপ। গভীর গর্ত থেকে লাশ তুলে আনার জন্য পিবিআই সদস্যরা যখন নিচে নামতে যাচ্ছিল তখন বিষধর সাপটি চোখে পড়ে। পরবর্তীতে গর্তের ভেতর আগুন ফেলে সাপটির মৃত্যু নিশ্চিতের পর আবার লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু গর্তের গভীরতা বেশি, পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের রাত হওয়ায় বুধবার রাতে উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে কঙ্কাল উদ্ধার কাজ শুরু হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী রামগড়-বাগানবাজার এবং হেঁয়াকোর গহীন জঙ্গলে বিপুল পরিমাণ তক্ষক পাওয়া যায়। এর কোনো আর্থিক মূল্য না থাকলেও একটি চক্র সাধারণ মানুষকে এখানে এনে জিম্মি করে রাখে। যাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ পাওয়া যায় না তাদের হত্যা করে জঙ্গলে লাশ গুম করে। এই তক্ষক পাচার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে সক্রিয়। ফটিকছড়ি বাগান বাজার ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের নূরপুর এলাকাটি খুবই দুর্গম। এখানে জনবসতি নেই। উদ্ধার কাজে পিবিআই ও পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করেছি।
পিবিআইর (চট্টগ্রাম জেলা) পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, আটক বিল্লাল হোসেন বাহান বাজার ইউনিয়নের লালমাই এলাকার বাসিন্দা। আমাদের কাছে স্বীকার করেছে সে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং ছদ্মবেশে তাকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছি। পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু হানিফ বলেন, ঘাতক বিল্লালের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এনজিও কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করেছি। পোস্ট মটেম রিপোর্ট পেলে বাকি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাধ্যমিকে বিভাগ আর থাকছে না
পরবর্তী নিবন্ধসোনাদিয়ায় জাহাজের ধাক্কায় ফিশিং ট্রলারডুবি