জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও–ক্যুরি (১৯০০–১৯৫৮)। ফরাসী পদার্থবিদ। তিনি এবং তার স্ত্রী ইরেন জোলিও–ক্যুরি যৌথভাবে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কারের ফলে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মকালীন তার নাম ছিল জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও। ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী জোলিও ‘একোলে সুপারিয়ার দ্য ফিজিক এট দ্য চিমি ইন্ডাস্ট্রিলেজ দ্য লা ভিলে দ্য প্যারিস’ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে বিখ্যাত মহিলা বিজ্ঞানী মেরি ক্যুরি‘র সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একপর্যায়ে জোলিও তার কন্যা ইরেন ক্যুরিকে ভালোবেসে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ অক্টোবর প্যারিসে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দ্বিতীয় ব্যাকালরেট ডিপ্লোমাধারী জোলিও তেজস্ক্রিয় উপাদানের উপর অভিসন্দর্ভ রচনা করে ডি.এসসি লাভ করেন। জোলিও তার জীবনের শেষদিকে অরসেতে পরমাণু পদার্থবিদ্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। সেখানেই তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষালাভ করেন। প্যারিস বিজ্ঞান অনুষদে প্রভাষক থাকাকালীন তিনি স্ত্রীর সাথে পরমাণুর গঠন সম্পর্কীয় গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফলস্বরূপ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে জেমস চ্যাডউইক কর্তৃক নিউট্রন আবিষ্কৃত হয়। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জোলিও–ক্যুরি দম্পতি রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের কারণে তাদের এ মূল্যায়ন করা হয়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই নাজি আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে জোলিও–ক্যুরি নিজস্ব নথিপত্র সংরক্ষণ করতে সমর্থ হন। ঐ নথিপত্রগুলো পরবর্তীকালে হ্যান্স ভন হেলবেন এবং লিউ কোয়ারস্কি‘র মাধ্যমে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন। ফ্রান্স দখলের ফলে তিনি ফরাসী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্রিয় সদস্যরূপে ন্যাশনাল ফ্রন্টে যোগ দেন। কলিন্স এবং লাপিঁয়েরে তাদের ইজ প্যারিস বার্নিং গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আগস্ট, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী উত্থানের সময় তিনি পুলিশের পুনর্গঠন ও অধিকারিত্ব অর্জনে ভিয়াচেস্লাভ মলোতভের সম্মানে ককটেল পার্টির আয়োজন করেছেন যা জার্মান ট্যাঙ্ক মোকাবেলায় অধিকতর উপযোগী ও সক্ষমতা প্রদর্শন করবে। ঐ সময়ে যুদ্ধের অনেকগুলো কীর্তির মধ্যে এটি ছিল একটি। জোলিও ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। জোলিও মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানার্থে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাদের প্রবর্তিত শান্তি পদকের নাম পরিবর্তিত করে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে জোলিও–ক্যুরি পুরস্কার রাখা হয়। এ পদকটি বিশ্ব শান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বর্ণপদক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ খিস্টাব্দে এ পুরস্কার লাভ করেন।