ছয় রোহিঙ্গা নিহত

উখিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পর আরও ২ জনসহ ৬ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০/১২ জন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার ভোর ৪ টার দিকে উখিয়ার বালুখালী- ১৮ নং ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অস্ত্রসহ এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছেন ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। একের পর এক বড় হত্যার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা জিম্মিদশায় দিনাতিপাত করলেও অজানা আতঙ্কে কেউ সহজে মুখ খুলছে না।
নিহত রোহিঙ্গারা হচ্ছেন, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মোঃ ইদ্রীস (৩২), নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫) ও হামিদুল্লাহ (৫৫), ছাত্র হাফেজ ইব্রাহীম হোসেন (২৪), আজিজুল হক (২২) ও ভলান্টিয়ার মোঃ আমীন (৩২)। আহতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। তবে সবাই রোহিঙ্গা বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানান, বালুখালী- ১৮ নং ক্যাম্পের মেইন ব্লক-এইচ/৫২ এর দারুল উলুম নাদাওয়াতুল ওলামা আল ইসলামীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন হেফজখানা কাম মসজিদে মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যখন তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ পড়তে জড়ো হন তখনই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
মসজিদের পার্শ্ববর্তী ঘরের একাধিক রোহিঙ্গা বলেন, ৫০/ ৬০ জনের একদল আল ইয়াকিন বা আরসা সন্ত্রাসী নিরীহ ছাত্র ও হুজুরদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মিয়ানমার সামরিক জান্তারাও কোনো সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটায়নি। তারা জানান, সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা আরসা সন্ত্রাসীরা মুসল্লিদের ওপর বন্দুক, দা, কিরিচ, ছুরি ও লাঠি নিয়ে এ হামলা করে। ইসলামিক মাহাস নামের রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ ওই মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে থাকে বলে রোহিঙ্গারা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসাটির একজন শিক্ষক বলেন, মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে আরসা সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসাটি উচ্ছেদপূর্বক তদস্থলে বাজার বসাতে চাপ দিয়ে আসছিল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় শীর্ষ নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যার পর পুলিশ ব্যাপক ধর পাকড় চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষে অধিকাংশ ছাত্র ও শিক্ষক নিজ নিজ ঘরে চলে গিয়েছিলেন বলে প্রাণহানি কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মাদ্রাসায় ৬০ জনের মত আবাসিক ছাত্র ও শিক্ষক থাকতেন। অধিকাংশ বাড়িতে যাওয়ায় ১৫/১৬ জনের মত অবস্থান করছিলেন। নিহতদের মধ্যে ৩ জন হাফেজ ও হুজুর, ২ জন ছাত্র ও ১ জন ভলান্টিয়ার রয়েছেন। আহতদের সকলে হুজুর ও ছাত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া-৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, কি কারণে আকস্মিক এ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। অস্ত্রসহ একজনকে আমরা আটক করেছি। ছয়জন নিহত হয়েছেন। আরও ৭ জনকে আহত অবস্থায় এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ এপিবিএন এর মিডিয়া কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরান হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ১১ নং ক্যাম্পের আবুল কালামের ছেলে মুজিবুর রহমান (১৭) কে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে একটি লোডেড ওয়ান শ্যূটার গান, ৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১ টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্র বন্ধে প্রয়োজনে গুলি : মোমেন
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে জ্বর সর্দির প্রকোপ