ছয় দিন ধরে বন্ধ রয়েছে নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের আলুর আড়ত। কাঁচা পণ্যের বৃহৎ আড়তটির পরিবেশ তাই সুনশান। নেই শ্রমিকদের চেনা হাঁকডাক। আড়তদাররা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং পাহাড়তলীসহ নগরীর অন্য এলাকার আলুর আড়তের সরকারি নির্দেশনা মতে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে না। তাই একই অঞ্চলে দুই আইন তো হতে পারে না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকায়। যদিও খুচরা বাজারে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন আজাদীকে বলেন, মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজ থেকে আমরা ৩০ টাকায় আলু পাচ্ছি না। সরকার নির্দেশনা দিয়েছে, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকায় বিক্রির জন্য এবং খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা যেন ৩৫ টাকায় বিক্রি করেন। কিন্তু ৩৫ টাকায় কিনতে না পারলে কিভাবে বিক্রি করবে? অভিযান চালাতে হলে অবশ্যই গোড়াতেই চালাতে হবে। কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৭ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে না। এখন কেবল পাইকারি বাজারে অভিযান চালালে ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হবে। আড়ত বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে রেয়াজুদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী বলেন, গত ২৭ অক্টোবর থেকে রেয়াজুদ্দিন বাজারের আলুর আড়ত বন্ধ। প্রশাসন ওইদিন হঠাৎ করে দশটি আড়তকে জরিমানা করে। অথচ বাজারের প্রতিটি আড়তদার কমিশনে ব্যবসা করেন। কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলুর বেপারিরা আলু পাঠান রেয়াজুদ্দিন বাজারে। কেজিপ্রতি কমিশন পেয়ে থাকেন আড়তদাররা। অভিযানের পর থেকে বাজারে বেপারিরা আলু দিচ্ছেন না। ফলে তারা এখন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, পতেঙ্গা, পাহাড়তলী এবং অক্সিজেন এলাকার আড়তে আলু সরবরাহ দিচ্ছেন। এতে আমরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার নির্দিষ্ট কোনো বাজারের জন্য এই দর নির্ধারণ করেনি। রেয়াজুদ্দিন বাজার কাঁচা পণ্যের একটি প্রাচীন বাজার। সাধারণ দিনগুলোতে প্রতিদিন ২০-২৫ ট্রাক আলু নামত। গত প্রায় এক সপ্তাহে এক বস্তা আলুও নামেনি। আমাদের আড়তের ওপর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী নির্ভরশীল। তারা এখন কাজ হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, চট্টগ্রাম শহরের অন্য এলাকায় যে দরে আলু বিক্রি হচ্ছে, সেই দরে আমাদের আলু বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া হোক।
গত ২০ অক্টোবর রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্তাদের সাথে আলু ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় হয়। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতিকেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এর আগে ৭ অক্টোবর প্রতিকেজি আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত এই দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন।