ছয় গুণী পেলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ একাডেমি পুরস্কার

এরা কেবল চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশেই সম্মানিত : অনুপম সেন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ জুন, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ বৌদ্ধ একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ছয় গুণীজন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৬ গুণীজনের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। বেনীমাধব ও ফণীভূষণ স্মারক বক্তৃতামালা ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ একাডেমি পুরস্কার প্রদান শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ একাডেমি। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, প্রফেসর ড. বেনু প্রসাদ বড়ুয়া, রম্য লেখক সত্যব্রত বড়ুয়া, প্রফেসর ড. সুমঙ্গল বড়ুয়া, অধ্যাপক শিশির কুমার বড়ুয়া ও প্রফেসর ডা. উজ্জ্বল কান্তি দাশ। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজ বিজ্ঞানী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন এই ৬ গুণীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বাংলা ভাষার স্বরূপ সন্ধান ঔপনিবেশিক কৃতী, রবীন্দ্রনাথের বাংলা শব্দতত্ত্ব, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীআবিস্কৃত চর্যাপদ এবং অতঃপর’ শীর্ষক বেনীমাধব ও ফণীভূষণ স্মারক বক্তৃতা করেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলু ইলিয়াস। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ একাডেমির পরিচালক প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক রীতা দত্ত, অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রাহমান, ডা. বসুবন্ধু বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. প্রীতি প্রসুন বড়ুয়া।

৬ গুণীকে সম্মাননা প্রদান উদ্যোগের প্রশংসা করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, যাদের সম্মাননা জানানো হল, তাঁরা প্রকৃতই গুণী। কেবল চট্টগ্রামেই নয়, সারাদেশের জন্যই তাঁরা গুণী, সম্মানিত। এজন্য আয়োজক সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাই। গৌতম বুদ্ধের বাণী উদ্ধৃত করে ড. অনুপম সেন বলেন, বুদ্ধ তাঁর বাণীতে বলেছেনবৈরিতাকে বৈরি দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হয়। অর্থাৎ সংঘাত নয়, প্রেম দিয়েই শক্রতাকে জয় করতে হবে। আজকের দিনে বুদ্ধের এই বাণী বড়ই প্রাসঙ্গিক ও খুবই জরুরি। সারগর্ভ স্মারক বক্তৃতারও প্রশংসা করেন তিনি।

স্মৃতিচারণ করে ড. বেনীমাধব ও অ্যাডভোকেট ফনীভূষণ বড়ুয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন লায়ন রুপম কিশোর বড়ুয়া। উদ্বোধকের বক্তৃতায় তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট ফণীভূষণ বড়ুয়া আমার বাবা ছিলেন। তিনি মানুষকে সেবার ব্রত বেছে নিয়েছিলেন। কাউকে সহযোগিতা করতে পারলে আমারও ভালো লাগে। অনেক ছেলেমেয়েকে স্কলারশীপ দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করি। কোনো ছেলে এসে যদি বলেআমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি। তখন আমি খুশি হই। বিশেষ করে যাদের আমি সহযোগিতা করেছি, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি এসে বলে। সবচেয়ে বেশি খুশি হই। ওই মুহূর্তে আমার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে, এই ভেবে যেআমার সহযোগিতায় একজন অন্তত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পেরেছে। স্বাভাবিক ভাবে মিষ্টি না খেলেও তাদের আনা মিষ্টি আমি না খেয়ে থাকিনা। অন্তর থেকে খুশি হই বলেই এটা করি।

সকলকে মানুষের সেবায় কিছু করতে চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়ে লায়ন রুপম কিশোর বড়ুয়া বলেন, শুধু মানুষ নয়প্রাণ প্রকৃতির জন্যও কিছু করার চেষ্টা করুন। দয়াশীল হোন। যারা পড়ায়অর্থাৎ শিক্ষক, তাদেরই যদি নৈতিকতা না থাকে, তবে তারা অন্যদের কি শেখাবে, এমন প্রশ্নও করেন তিনি।

মানবতার সেবায় নিজেদের সম্পৃত্ত করার আহ্বান জানিয়ে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আসুন মানবতার ফেরি করে বেড়াই। আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেকের নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে আমরা প্রতিবছর স্কলারশীপ দিয়ে আসছি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতিজনকে মাসে দেড় হাজার টাকা করে দিয়ে আসছি।

একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ অনির মৃত্যুর পর থেকে লায়ন রুপম কিশোর বড়ুয়ার মানব সেবামূলক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে এম এ মালেক বলেন, তার গ্রামের বাড়িতে আশ্রম করা হয়েছে। সেখানে হিন্দুবৌদ্ধখ্রীস্টান ভেদাভেদ নেই। সকল ধর্মের ছেলেমেয়ে সেখানে বেড়ে উঠছে। লায়ন রুপম কিশোর বড়ুয়ার সেবামূলক যে কোনো কাজে সর্বদা পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রম্য লেখক সত্যব্রত বড়ুয়া বলেন, অনোমা আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি সংগঠন। তাদের এই পুরস্কার আমি সানন্দে গ্রহণ করেছি। আমি অত্যন্ত খুশি। সম্মাননা প্রদানের এই আয়োজনের জন্য তাদেরকেই আমি অভিনন্দন জানাই। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারা সত্যব্রত বড়ুয়া

হুইলচেয়ারে ভর করেই এসেছিলেন অনুষ্ঠানস্থলে। বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে এই রম্য লেখক বলেন, আমি শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম। এরপরও এখানে পরিচিত ও শুভানুধ্যায়ী অনেকের সাথে দেখা হবে, সে উদ্দেশ্যেই এখানে আসা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে এবং অনেকের সাথে দেখা হওয়ায় তৃপ্তিবোধের কথা বলেন লেখক সত্যব্রত বড়ুয়া। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরাও নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন।

অ্যাডভোকেট জিকো বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর মহাসচিব সুজন কুমার বড়ুয়া, একাডেমির অর্থ সচিব তুষার কান্তি বড়ুয়া প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ের সাত মাসের মাথায় ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬