ছোট হয়ে আসছে গুমাই বিল

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ২২ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল। বৃহত্তম চলন বিলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘ধানের গোলা’ খ্যাত গুমাই বিল দেশের অর্থনীতিকে করছে সমৃদ্ধ। প্রচলিত কথা, দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদন হয় এই বিলে। তবে গুমাই বিলের এই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়ি। জমি ভরাট করে হচ্ছে নানা স্থাপনা। এমনকি ইটভাটাও হয়েছে। এর ফলে ছোট হয়ে আসছে এই বিল।
জানা যায়, গুমাই বিল একসময় ঝিল ছিল। এই বিলজুড়ে ছিল মাছ। নানা প্রজাতির পাখিতে ভরপুর ছিল। ১৯৪৫ সালে রাঙ্গুনিয়ার কৃতী পুরুষ মরহুম আব্দুল বারী তালুকদার গুমাই বিল সংস্কার করে প্রথমবারের মতো আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেন। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে গুমাই বিলের জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনা হয়। রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গুমাইবিলের অবস্থান। গুমাই বিলের জমিতে প্রতি বছর ইরি ও আমনের বাম্পার ফলন হয়। পাকিস্তান আমলে এই বিলে শুরু হয়েছিল ধান চাষ। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো এখানে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়ে এর ব্যাপকতা।
স্থানীয় শত শত কৃষকের জমি রয়েছে এখানে। এছাড়া গুমাই বিলে বাইনালার ছড়া, সোনাইছড়ি, মুন্দরী, কুরমাই, ইছামতি, বারঘোনিয়া, ঘাগড়া হ্রদ খাল ও গুট্টাকার খাল গুমাইতে প্রবাহিত হয়। এগুলোর মাধ্যমে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কৃষি বিভাগ। শুরুতে এই বিলের আয়তন চার হাজার হেক্টরের বেশি থাকলেও বর্তমানে তা কমে তিন হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। আবাদি এই বিলে অপরিকল্পিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসলেও তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। এখনো পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
কাপ্তাই সড়ক পথে মরিয়মনগর চৌমুহনী পার হলেই দেখা মেলে গুমাই বিলের। কিন্তু মরিয়মনগর থেকে শুরু করে লিচুবাগান পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে কৃষি জমি ভরাট করে একের পর এক গড়ে উঠছে স্থাপনা। ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। আবাসিক আর অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক ভবনের পাশাপাশি বিলে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইটভাটার কারণে এর আশেপাশে কৃষি জমিতে ধানের ফলনে প্রভাব পড়ছে।
কদমতলি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হাশেম বলেন, গুমাই বিলের কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিত্তবানরা কৃষিজমি নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।
চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিচ আজগর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সেখানে ঐতিহ্যের গুমাই বিলে শ্রেণি পরিবর্তন করে চলছে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। ইদানীং আরো বেড়ে গেছে। এই ব্যাপারে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া হলে আমি সহযোগিতা করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কারিমা আক্তার বলেন, গুমাই বিলে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে, এটি সত্য। স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বাধাদানের এখতিয়ার আমাদের না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে গুমাই বিলে ইটভাটার ব্যাপারে এর ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, কৃষিজমির বেচাকেনা করা যাবে। কিন্তু শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে অনুমতি নেয়ার বিধান আছে। গুমাই বিল রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর একটি ম্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ম্যাপ তৈরি হয়ে গেলে এটি রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার অচল সাড়ে ১০ কোটি টাকার রেডিওথেরাপি মেশিন
পরবর্তী নিবন্ধদুদিন সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ল চা শ্রমিকরা