ছোট্ট ফড়িং আর বোকা মাকড়সা

রোকসানা বন্যা | বুধবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

অনেকদিন আগের কথা। এক গভীর জঙ্গলের পাশে ছিল একটা ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে ছিল অনেক গাছপালা, ফুল আর লতাপাতা । সেই গাছে বাস করত হাজার হাজার ফড়িং, প্রজাপতি, আর নানা রঙের কীটপতঙ্গ।

কিন্তু সেই গ্রামে সবাই একটি মাকড়সাকে খুব ভয় পেত। সে মাকড়সার নাম ছিল কালো ভুতম। ভুতম দেখতে ছিল কালো, বিশাল আর তার জালে পড়লে কোনো পোকা আর বাঁচত না। সে খুব অহংকারী ছিল। সে সবসময় ভাবত, এই জঙ্গলে আমিই সবচেয়ে চালাক আর শক্তিশালী।

একদিন ছোট্ট একটি ফড়িং, যার নাম ছিল নীলা, সে খেলা করতে করতে এক অচেনা জায়গায় চলে গেল। নীলা ছিল খুব সাহসী আর কৌতূহলী। সে যখন গাছের ডালে বসল, হঠাৎ তার চোখে পড়ল কালো ভুতুমের বিশাল জাল। সেই জালে একটা ছোট প্রজাপতি আটকে কাতরাচ্ছিল। প্রজাপতিটা নীলাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল, নীলা, আমাকে বাঁচাও! আমি আর উড়তে পারছি না! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

নীলা খুব ভয় পেয়েছিল, কিন্তু তার বন্ধুর এমন বিপদ দেখে সে স্থির থাকতে পারল না। সে দেখল, ভুতুম তখন তার জালের একপাশে ঘুমাচ্ছিল। নীলা খুব বুদ্ধি করে উড়তে উড়তে ভুতুমের কাছে গেল আর চিৎকার করে বলল, ওহে কালো ভুতু, তুমি তো খুব চালাক। কিন্তু তুমি কি জানো, আমি তোমাকে একটা খেলা দেখাতে পারি? এমন একটা খেলা যা তুমি আগে কখনো দেখোনি।

ভুতুম জেগে উঠল আর অহংকারী হাসি হেসে বলল, তুমি? ছোট্ট একটা ফড়িং। তুমি আমাকে খেলা দেখাবে? আমি তো এই জঙ্গলের সবচেয়ে চালাক!

নীলা বলল, “হ্যাঁ, আমিই দেখাব। তুমি তোমার জাল থেকে প্রজাপতিটাকে ছেড়ে দাও। তারপর আমি তোমাকে খেলা দেখাব।”

ভুতুম ভাবল, এইটুকু একটা ফড়িং, কীইবা এমন করতে পারে। আর একটা প্রজাপতি সেতো তুচ্ছ। আমি বরং এর খেলা দেখে ওকে আর এই ফড়িংটাকে একসঙ্গেই খাব।

ভুতুম হাসিমুখে প্রজাপতিটাকে ছেড়ে দিল। প্রজাপতিটা কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে গেল।

নীলা তখন ভুতুমকে বলল, “তুমি কি জানো, তোমার এই জাল মোটেই সুন্দর নয়। এটা শুধু শিকার ধরার জন্য বানিয়েছো, বিশ্রি । তুমি যদি সত্যিই চালাক হও, তবে তুমি এমন একটা জাল বানাতে পারো যা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর জিনিস হবে। তাতে কোনো পোকা মরবে না, বরং সবাই তোমার জাল দেখতে আসবে।”

ভুতুম নীলার কথা শুনে একটু ভাবল। তার অহংকারী মন বলে উঠলো বাহ, তাই তো! আমি কেন শুধু শিকার করব? আমি তো সুন্দর জিনিসও বানাতে পারি।

ভুতুম তখন নীলাকে বলল, “কিন্তু কীভাবে বানাবো ?”

নীলা বলল, “খুব সহজ। তুমি তোমার জালটা বুনতে বুনতে তাতে নানা রঙের ফুল আর পাতার রস মিশিয়ে দাও। তাতে তোমার জাল হবে রঙিন আর সুন্দর।”

ভুতু, নীলার কথা মতো কাজ শুরু করল। সে সারাদিন ধরে তার নতুন জাল বুনতে লাগল। সে তার জালে নানা রঙের পাতার রস আর ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে দিল। সন্ধ্যাবেলা তার জালটা দেখতে এক্কেবারে অন্যরকম হয়ে গেল। সেটার রং ছিল হালকা গোলাপি, লাল, বেগুনি, নীল আর হলুদ। সে জালের পাশে বসে অপেক্ষা করছিল, কখন কোনো পোকা আসবে, কিন্তু কোনো পোকা এল না।

সকালে ভুতুম দেখল, তার জালের সামনে হাজার হাজার প্রজাপতি আর ফড়িং ভিড় করেছে। তারা ভুতুর নতুন জাল দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। একজন ফড়িং বলল, “আহা! কী সুন্দর জাল!”

আরেকজন প্রজাপতি বলল, “ঠিক যেন আকাশের রঙধনু!”

ভুতুম অবাক হয়ে দেখল যে, এই প্রথমবার কোনো পোকা তাকে ভয় পাচ্ছে না, বরং প্রশংসা করছে। তার মনে এক অদ্ভুত আনন্দ এল। সে তখন বুঝল, মানুষকে ভয় দেখিয়ে নয়, বরং ভালোবাসা দিয়ে, সুন্দর কাজ দিয়ে মন জয় করা যায়।

এরপর থেকে সে আর কাউকে শিকার করত না। সে তার জালের মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট ফুল আর পাতার নকশা করত। গ্রামের সবাই দেখতে আসতো, গল্প করতো। নীলাও তার বন্ধু হয়ে গেল। তারা দুজন মিলে সেই গ্রামের সবাইকে আনন্দ দিত।

দুজনেই বুঝতে পারলো, ভয় দেখিয়ে আর হিংসা দিয়ে জয় করা যায় না, মানুষের মন জয় করা যায় ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর ভালো কাজ দিয়ে। চলো বন্ধুরা আমরা আজ থেকে ভালো কাজ করি, ভালো পথে চলি, মানুষের মন জয় করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছিলোনীয়া আমার ছিলোনীয়া
পরবর্তী নিবন্ধরহস্যময় সাহারা মরুভূমি