আমাদের শৈশবটা ছিল স্বপ্নের মত। আমি আর বিজু আবহাওয়ার সাথে তাল রেখে এমন কোন খেলা নাই যে খেলতাম না। এর সাথে যোগ হইছিল টিভি গেইম। কখনো বিজুর বাসায় আবার কখনোও আমাদের বাসায় বিজু আর আমি শুধু খেলেই যাচ্ছি। আর আমাদের ছোট ভাই ব্রাদারগুলা একটা সুযোগ পাওয়ার জন্য তীর্থের কাকের মত বসে থাকত কখন আমরা একটা ব্রেক নিব। সুপার মারিও, কমান্ডো, মুস্তাফা আরোও কত নাম ভুলে যাওয়া গেইম গুলা শেষ স্টেজ পার না করা পর্যন্ত শান্তি ছিল না। চটইএ যুগের ছেলে পেলেরা অবশ্য এগুলা দেখলে হাসাহাসি করবে।
এগুলা ভাবতেই ভাবতেই বিজুর ফোন, ঐপাশ থেকে বলল টুটুল কেমন আছিস? তোকে কতদিন ধরে খুজে খুজে কিছুদিন আগে সুমন থেকে তোর আইডি পেলাম। একটু অভিমান করে বলল আমি তার কোন খোঁজ করিনি। আমিও সাথে সাথে তাকে বললাম দোস্ত তোমাকে আমিও তো অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম। মোহাম্মদ জিয়াউল আজাদ, বিজু এগুলো দিয়ে কত সার্চ করলাম কিন্তু কিছুতেই পেলাম না। তুই যে মোহাম্মদ ছোট করে মোঃ আর জিয়াউল বাদ দিয়ে শুধু মোঃ আজাদ দিয়ে আইডি সেটা তো আর আমি জানিনা। এই গ্রুপটা খোলার আমার প্রথম ইচ্ছা হইছিল ২০১৪ সালেরও আগে। কিন্তু অলস আমি ছোটবেলাই যা ভাবতাম তা করতাম না আর যা ভাবতাম না তা কখনোই করতাম না। যাই হোক ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যখন নাসিরাবাদে যখন আমাদের গেট টুগেদার হল তখন স্কুলের ক্লাস রুমের প্রায় সবাই সামনে কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছিল কি যেন একটা মিসিং। ছোটবেলার স্মৃতিগুলোতে শুধু এক স্কুলের বন্ধুরাই নাই, একই পাড়ায় থাকা অন্য স্কুলের বন্ধুরা তারপর স্যারদের বাসায় পড়ার সময়কার ভিন্নভিন্ন স্কুলের বন্ধুদেরকেও বিশেষ করে বিজু, আশিক, সুমনদের কথা তখন মনে পড়ছিল। তখনই ভাবলাম গ্রুপ্টা খুলেই ফেলি। আরোও পিচ্চিকালের ক্লাসমেট আরেক পাচলাইশ নিবাসী তানিয়াকে নিয়ে এই গ্রুপ্টা খুলে ফেললাম। বিজুর কথা তখন খুব মনে পড়ছিল কিন্তু তাকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিজুকে বললাম গ্রুপের মুখবন্ধ না কি যেন বলে সেখানেও দেখ তোকে মেনশন করছি। যাইহোক শেষ পর্যন্ত পেলাম ছোটবেলার সেই হারিয়ে যাওয়ার বন্ধুকে। আজ তার জন্মদিন। ছোটবেলাই আমার আর তার এত জন্মদিন এল গেল কোন দিন উইশ করা হয়নি। তখন এর রেওয়াজই ছিল না। আমার ৫ বছরের বড়বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বাসায় প্রথম জন্মদিন উদযাপন করে। তার বন্ধুদের নিয়ে কেক কাটছিল সে কিন্তু কেন জানি আমার খুব লজ্জা লজ্জা লাগছিল। আর এই মুহূর্তে আমার আফসোস হচ্ছে তোর কেক কাটার সময় তুই আমাদের থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে। লেখাপড়ায় নিয়মিত আমার বন্ধু এখন সানফ্রান্সসিকো শহরে আমাজন কোম্পানীর মস্ত বড় বিজ্ঞানী। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে খুঁজে বের করে বাংলাদেশ টাইমের সকাল ৯ টায় যখন ফোন দিল তখনও আমি ঘুমে। ঘুম ভেঙে ফোন ধরে সবার প্রথমে মুরগীর লেগ পিছ তা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।