ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী | সোমবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের বেদনার, শোকের এবং গৌরবের মাস, জাগরণের মাস, এই মাস আমাদের অহঙ্কার। ১৯৫২ সালে শহীদ হয়েছিলো সালাম, বরকত, রফিক, শফিক জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে। এই নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের বাংলা ভাষা। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কতৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই দিনটি, যা বিশ্বের প্রায় বেশ কটা দেশে পালিত হচ্ছে অত্যন্ত সম্মান এবং মর্যাদার সাথে। কিন্তু বাংলা ভাষাকে সমুন্নত রাখার জন্য যারা জীবনবাজি রেখেছিলেন, যাদের জন্য এই ভাষা আজ বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিয়েছে তাদেরকে কতটা সম্মান আমরা দেখাতে পেরেছি, আজো সর্বত্র বাংলা ভাষাকে কি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি! শুধুমাত্র প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে খুঁজে বেড়াই,মাতৃভাষার প্রতি দরদ বেড়ে যায়। বিভিন্ন অফিস,আদালত,মার্কেট, হোটেল রেঁস্তোরা দোকানপাটে বাংলা অবহেলিত সাইনবোর্ডগুলো চোখে পড়ে, তারপর শুরু হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। ফেব্রুয়ারি মাস চলে গেলে আবার একই নিয়মে ফিরে যাওয়া।
আজ সারা বিশ্ব পালন করছে ভাষা দিবস।এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের,অনেক বড় পাওয়া, কিন্তু এর পেছনের যে ত্যাগ,ভাষা শহীদদের অবদান সেটা ভুলে গেলেতো চলবেনা। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস, একুশ মানে শহীদ মিনার,একুশ মানে প্রভাতফেরী, একুশ মানে খালি পায়ে হেঁটে হাতে ফুল নিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো, তাদের সামনে মাথা নত করা। খুব কষ্ট হয় যখন দেখি এই দিনটি তে সরকারি ছুটি উপলক্ষে বিভিন্ন আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়। বড় বড় বাসগুলোতে বনভোজন লিখে আনন্দ করতে করতে হিন্দি গান বাজিয়ে সরকারি ছুটি উপভোগ করা হয়, পরিবারের সকলে মিলে বেছে নেয়া হয় দূরে কোথাও আনন্দ ভ্রমনে যাওয়ার জন্য। দিনটা যে একটা শোকের ও দিন সেটা বোধহয় বাঙালি ভুলতে বসেছে।এই যদি হয় আমাদের অবস্থা তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি শিখবে! তারা কি করে জানবে একুশ কি,ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা,শহীদ মিনার কি, প্রভাতফেরী কি?
ভাষা শহীদেরা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, কত মায়ের চোখের অশ্রুর বিনিময়ে পাওয়া এই ভাষা আর আমরা তাদেরকে সম্মান বা শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য এই একটা দিন কি আনন্দ উৎসব বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে একুশের চেতনা কিভাবে জাগ্রত করা যায়,তাদেরকে কিভাবে ইতিহাস শেখানো যায় সেই চেষ্টা করতে পারিনা! উৎসব করার জন্য এরকম আরও অনেক সরকারি ছুটি তো পাওয়া যাবে। বাংলা ভাষা কারো দয়ায় পাওয়া না, অনেক দাম দিয়ে কেনা এই ভাষা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সুশৃঙ্খল জাতি হিসাবে তখনই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো যদি নিজের ভাষাকে সম্মান করতে শিখি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার ভাষা আমার অহংকার
পরবর্তী নিবন্ধইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা