নিজের ছেলের ফল জালিয়াতির অভিযোগে অবশেষে চাকরি গেল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের। আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি হয়েছে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া হল এ ব্যবস্থা।
ঘটনাটির সূচনা ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশকে ঘিরে। ওই বছর চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে পরীক্ষায় বসেছিলেন নারায়ণের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ। ফলাফলে দেখা যায়, তিনি কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পাননি। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায়, ফলাফল সফটওয়্যারে প্রবেশ করে তাঁর নম্বর সংশোধন করে জিপিএ-৫ দেখানো হয়েছে।
এই ফল পরিবর্তনের পেছনে বোর্ডের কয়েকজন আইটি কর্মী ও কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলেই তদন্তে উঠে আসে। অভিযোগ ওঠে, বোর্ডের সচিব হিসেবে পদে থাকার সময়ই নারায়ণ চন্দ্র নাথ প্রভাব খাটিয়ে ছেলের ফল পরিবর্তন করিয়েছিলেন।
এমন অনিয়ম সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মাউশির তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলে। ফল বাতিলের পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ আসে। ওই বছরই নারায়ণ চন্দ্র নাথকে বোর্ড থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়।
তবে ঘটনা থেমে থাকেনি সেখানেই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। অভিযুক্ত হন নারায়ণসহ আরও তিন কর্মকর্তা। মামলা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়।
হাইকোর্ট থেকে অস্থায়ী জামিন পেলেও গত ১৭ জুন জামিনের মেয়াদ শেষে চট্টগ্রামের একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন নারায়ণ চন্দ্র নাথ। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সেই প্রেক্ষিতেই গতকাল (৭ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আদেশে বলা হয়, বরখাস্তকালীন তিনি খোরপোষ ভাতা পাবেন, তবে নিয়মিত দায়িত্ব পালনে অযোগ্য থাকবেন।
ঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা এবং আইটি শাখার কর্মচারীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ফল প্রস্তুত কমিটির অন্তত তিন সদস্য এই অনিয়মে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে বোর্ডের বর্তমান সচিব প্রফেসর ড. এ.কে.এম সামছু উদ্দিন আজাদ বলেন, “সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ফল পরিবর্তনের মতো গুরুতর অনিয়ম শিক্ষা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”এই বিষয়ে আরও তদন্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।