স্ত্রীর পরকীয়া সইতে না পেরে ছেলেকে বিষ পান করিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছে প্রবাসী বাবা। নিহতরা হলো বাবা নুরুল কবির(৩৮) ও ছেলে মো. সানি(৯)।
আজ মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া এজাহার ডাক্তারের বাড়ির একটি পুকুর পাড় থেকে ছেলের মরদেহ ও বাবাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে বাবা মারা যায়।
তাদের বাড়ি বান্দরবান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বালাঘাটা সিকদার পাড়ায়। তবে তারা বান্দরবান থেকে সাতকানিয়ায় কেন এসেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া ও বান্দরবান থানা পুলিশ জানায়, বান্দরবান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বালাঘাটা সিকদার পাড়ার আমিন শরীফের ছেলে প্রবাসী নুরুল কবির বাদী হয়ে তার স্ত্রী নাছিমা আকতার ও বালাঘাটা এলাকার ওসমান গনির ছেলে গ্রামীণ ব্যাংক কর্মী জমির উদ্দিনকে আসামী করে গত ২২ সেপ্টেম্বর বান্দরবান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই অভিযোগে নুরুল কবির উল্লেখ করেছেন, বিগত ৫-৬ মাস যাবৎ তার স্ত্রী নাছিমা আকতার গ্রামীণ ব্যাংক কর্মী জমির উদ্দিনের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে জমির উদ্দিন ও নাছিমা আকতারকে নুরুল কবিরের বাড়ি থেকে লোকজন একবার আটক করেছে। বিষয়টি জানার পর নুরুল কবির আবুধাবী থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর স্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময়ে পাঠানো টাকা এবং স্বর্ণালংকার ফেরৎ চাইলে স্ত্রী তা দিতে পারেনি।
এদিকে, আজ বিকালে নুরুল কবির সাতকানিয়ার জনার কেঁওচিয়া এজাহার ডাক্তারের বাড়ির একটি পুকুরে ছেলেকে বিষ পান করিয়ে হত্যার পর নিজে বিষ পানে আত্মহত্যা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এজাহার ডাক্তারের বাড়ি এলাকার হোসাইন মোহাম্মদ এনাম ও জমির উদ্দিন জানান, আজ বিকালে নির্মাণাধীন রেললাইনে এলাকার ছেলেরা খেলা করছিল। এসময় পার্শ্ববর্তী পুকুর পাড়ে কেউ একজনকে ছটফট করতে দেখলে ছেলেরা দৌড়ে যায়। তখন দেখে নুরুল কবির নামের এক ব্যাক্তি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এবং পাশে তার ছেলে সানির মরদেহ পড়ে আছে।
মিজানুর রহমান নামের অপর একজন বলেন, “নুরুল কবির ও তার ছেলে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়াস্থ আঁধার মা’র দরগাহ এলাকায় আসে। সেখানে দোকান থেকে পানি নেয়। পরে নুরুল কবির ছেলেকে জোরপূর্বক টেনে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে চলে আসে। এরপর কোথায় গেছে জানি না। তবে আজ দুপুরে এজাহার ডাক্তারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে তাদেরকে বসে থাকতে দেখেছি। বিকালে তারা পুকুর পাড়ে গিয়ে বিষ পানে আত্মহত্যা করে।”
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ পুকুর পাড় থেকে নুরুল কবিরকে জীবিত এবং তার ছেলে সানির মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিষের বোতলও উদ্ধার করা হয়েছে। নুরুল কবিরকে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। বাবা ও ছেলে দুইজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
তিনি আরো জানান, নুরুল কবির গত এক মাস আগে তার স্ত্রী নাছিমা আকতার এবং জমির উদ্দিন নামের এক গ্রামীণ ব্যাংক কর্মীর বিরুদ্ধে বান্দরবান সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেখানে তার স্ত্রীর সাথে জমির উদ্দিনের পরকীয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্ত্রীর পরকীয়া সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।