ছেলেকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ মায়ের লাশ মিলল ডিএনএ টেস্টে

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : দগ্ধ আরো দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্কুল থেকে ছেলেকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া মা আফসানা প্রিয়ার (৩০) লাশ পাওয়া গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। বিমান বিধ্বস্তের তিনদিন পর গতকাল সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ জানায়, আফসানা আক্তার প্রিয়ার মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। সিআইডির বিশেষ পুলশ সুপার জসিম উদ্দীন খান জানান, আফসানা আক্তার প্রিয়ার মরদেহ শনাক্তের জন্য তার বাবা মো. আব্বাস উদ্দিন ও মা মোসা. মিনু আক্তার ডিএনএ নমুনা দেন। এরপর আফসানা আক্তার প্রিয়ার মরদেহ শনাক্ত করা হয়।

স্কুলটির তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আফসান ওহিকে আনতে তার মা আফসানা আক্তার প্রিয়া স্কুলে যান। বিমান বিধ্বস্তের পর থেকেই ওহির মা প্রিয়া নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পর থেকেই মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে আফসান ওহি।

সিআইডি জানায়, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২২ জুলাই সিআইডির ডিএনএ ল্যাবের সদস্যরা ঢাকা সিএমএইচে রক্ষিত অশনাক্ত মরদেহ ও দেহাংশ থেকে মোট ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। এ নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে মোট পাঁচ নারীর ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। সংগৃহীত নমুনা থেকে প্রস্তুত প্রোফাইল ও ঘটনার পর থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৫টি পরিবারের মোট ১১ সদস্যের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে ৫টি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরো দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটের দিকে ১৫ বছর বয়সী মাহতাব রহমান মারা যায় বলে জানিয়েছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। তিনি বলেন, মাহতাবের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সে মারা গেছে। ইংরেজি মাধ্যমের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহতাব কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মিনহাজুর রহমানের একমাত্র ছেলে। সে উত্তরায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। মাহতাবের বাবা মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া ঘটনার পর জানিয়েছিলেন, তিনিই প্রতিদিন মাহতাবকে স্কুলে আনানেওয়া করতেন। সোমবারও ছেলেকে আনতে গিয়েছিলেন, কিন্তু বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ হয় সে। পরে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপরদিকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে মারা যায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিয়া (১৫)। ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘মাহিয়ার শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিকেলের দিকে সে মারা যায়।’

এদিকে মাইলস্টোন ট্যাজেডিতে দগ্ধ ও আহত ৫৬ জন এখনো জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মাইলস্টোনের কৃতজ্ঞতা : ঢাকায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার এক লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, দুর্ঘটনার প্রথম থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার, যোগাযোগ, সেবা, চিকিৎসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেসব ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সব গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি, যারা মর্মান্তিক এ ঘটনাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবার দৃষ্টিগোচর করেছেন।

সেখানে বলা হয়, এ দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হন ৫১ জন। এদের মধ্যে ৪০ শিক্ষার্থী, সাতজন শিক্ষক, একজন অভিভাবক, একজন আয়া ও একজন পিয়ন রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, কর্তৃপক্ষের তথ্য হালনাগাদকরণের কাজ চলমান। এই দুঃখজনক ঘটনায় হতাহতের সর্বমোট সংখ্যা তুলে ধরছে আইএসপিআর। দুপুর ১টা ১২ থেকে ১টা ১৪ মিনিটের মধ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ বলছে, বেলা ১টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় তখন অভিভাবকদের জন্য শুধু স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী অপেক্ষারত অবস্থায় ছিল। এ সময়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।

হতাহতদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে সরকার : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান করবে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের সহায়তার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।

চারটি শ্রেণির ক্লাস রোববার থেকে : ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ছয় দিন বাদে সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আগামী রোববার থেকে দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের চারটি শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল। তিনি বলেন, রোববার থেকে আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ফুললি শুরু হতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে; কারণ স্কুলের বাচ্চারা তো এখনও ট্রমার মধ্যে আছে। এঙিডেন্টটা মূলত স্কুলের সেকশনেই হয়েছে। তাই আপাতত নাইন, টেন, একাদশ, দ্বাদশএদের ক্লাসগুলো শুরু হয়ে যাবে। তারপর আস্তেআস্তে স্কুলেরগুলো শুরু হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজেক সড়কে পাহাড় ধস, ১০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল যান চলাচল
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার