ছেঁড়া কাগজের গান

আবু মুসা চৌধুরী | শুক্রবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলা কবিতার ইতিহাস মানে বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাস। বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যদের রচিত বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ-এর শীর্ষদেশে সঙ্গীতের রাগ নির্দেশিত। বৈষ্ণব পদাবলি, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ী দ্য সভস্‌ অকারিংস বা গীতাঞ্জলি মূলত সঙ্গীত।
বিষয়গুলো উঠে এলো এজন্যে যে, সম্প্রতি প্রকাশিত বিদ্যুৎ কুমার দাশ-এর ছেঁড়া কাগজের গান শীর্ষক গ্রন্থিত সঙ্গীতাঞ্জলি একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনা। বিপ্লবীও বৈকি। কেননা গান যতোটা সাহিত্য পদবাচ্য, তার চেয়ে অধিক মিতালী বা দৌত্য সুর-এর সমীপে। তবুও কোনো কোনো গান সুর ছাপিয়ে বা বাণীর মাধুর্যে শিল্পে ও কলাসৌন্দর্যে প্রাণ পায়, মূর্ত হয়ে ওঠে। ওই রচনায় কাব্য ও সাঙ্গিতিক সুষমা একাকার হয়ে যায়। যেমন ধরা যাক সন্ত কবীর-এর দোঁহা কিংবা মীরার ভজন। সে নিরিখে বিদ্যুৎ কুমার দাশ এর ছেঁড়া কাগজের গান একটি সার্থক শিল্প প্রয়াস।
বিদ্যুৎ কুমার দাশ- এর সংকলিত সঙ্গীতসংগ্রহের নাম ‘ছেঁড়া কাগজের গান।’ দেশের গান, গণসঙ্গীত, ধর্মীয়, আধুনিক আঙ্গিকের ৫০টি গানের সংকলন। এই গ্রন্থ সম্পর্কে মরমী সঙ্গীত সাধক সৈয়দ মহিউদ্দিন এরঅভিমত-
বহুমাত্রিক রচনায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখার পাশাপাশি শৈশব থেকে বিদ্যুৎ গান রচনায়ও নিমগ্ন রয়েছেন। ৩০-৩৫ বছর আগে লেখা গানের পুরনো কাগজ থেকে নেওয়া ছেঁড়া কাগজের গান।
বিদ্যুৎ -এর রচনাশৈলীর প্রাণভ্রোমরা সহজ সৌন্দর্য। নিষ্কলুষ নিবেদনে তার পঙক্তিগুলো প্রাণ পায়। অর্চির ভিতরে আঁচ’ বা এ দ্বিধার দাহ, এ জীবনে/হায় ঢেকে রাখি/তবু তোমায় বারে বারে ডাকি নয়তো তোমার সমস্ত প্রেম আমাকে দিলে/আমার আমিকেও দেবো- ইত্যাকার চিত্রকল্প সমুদয় আপাতঅর্থ ছড়িয়েছাপিয়ে অন্য কোনো অধরা মাধুরীর নৈবেদ্যে বৃত। নান্দনিক সুসময় পরিপ্লাবিত।
বিদুৎ কুমার দাশ-এর ছেঁড়া কাগজের গান এর প্রাণসম্পদ কাব্যময়তা। বিদ্যুৎ একজন যশ্বসী কবি। তাই তার যে কোনো রচনায় কবিতার প্রাণ রসায়নসুলভ। তা তো স্বাভাবিক। আর একারণে ‘ছেঁড়া কাগজের গান’ গ্রন্থে বস্তুত কবিতাই রচনা করেছেন তিনি।
গ্রন্থের সর্বত্র ইতি-উতি কবিতার পরিপ্লুত ঝিলিক স্ফুট। আর এই হলো এই গ্রন্থের মৌলিক মাধুর্য।
তার রচনার ভরকেন্দ্রে প্রেম, আধ্যাত্মিকতা, মৃত্যুচেতনা, নিসর্গ, নিঃসঙ্গতার হাহাকার, প্রেমের উচ্ছ্বাস ও আকুতি বা নিঃশর্ত নিবেদন বাঙময়।
ছেঁড়া কাগজের গান-এর চমৎকার ছবি এঁকেছেন অর্নি দাশ ও ঋভু দাশ। ছবিগুলোর সহজিয়া সৌন্দর্য, মান, ধার ও ভার অপরিমেয়। মুদ্রণপ্রমাদে চোখ আহত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোক ঐতিহ্যের চিরায়ত কাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধআসা-যাওয়ার পথে