ছুটির দিনে লোকে লোকারণ্য বিজয় মেলা

নগরীর একাংশে দীর্ঘ যানজট

ইমাম ইমু | শনিবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ছুটির দিনে পুরোদমে জমে উঠেছে চট্টগ্রাম নগরের বিজয় মেলা। দূরদূরান্ত থেকে মেলা দেখতে ছুটে এসেছেন শত শত মানুষ। ছুটির দিন পেয়ে পরিবারসহ এসেছেন কেউ কেউ। ছয়দিনব্যাপী বিজয় মেলার গতকাল শুক্রবার ছিল তৃতীয় দিন। এদিন মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় মানুষে পূর্ণ হয়ে গেছে। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না মেলার গেটে। মেলার বাইরেও পা ফেলার মতো জায়গা ছিল না। মেলার স্থান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। অনেককে ভিড়ের কারণে মেলায় ঢুকতে না পেরে ফিরে যেতে হয়েছে। এদিন মেলাকে ঘিরে নগরের কিছু এলাকায় ছিল তীব্র যানজট। সড়কে যানজট আর মেলা উপলক্ষে আসা লোকে নগরের কাজীর দেউড়ি, লালখান বাজার এবং সিআরবি এলাকা একাকার হয়ে যায়। অনেকে মেলায় জায়গা না পেয়ে সিআরবিতে ঘুরতে চেলে যান। ফলে জমজমাট ছিল সিআরবি প্রাঙ্গণও। গত বুধবার বিজয়ের মাস উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরে শুরু হয় ছয় দিনের বিজয় মেলা। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নগরের সার্কিট হাউস সংলগ্ন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের খালি মাঠে হচ্ছে এ বিজয়মেলা। মেলায় দেখা যায়, স্টলে স্টলে পসরা সাজানো নানা বই, মাটির জিনিস, নারীদের বিভিন্ন অলংকারসহ দেশীয় পণ্য। রয়েছে দেশীয় নানা পণ্য, নার্সারি রেস্টুরেন্ট, বিনোদনমূলক ও অন্যান্য ধরনের স্টল। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ মেলায় এসেছেন। মেলায় প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২৪ এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল্যবোধকে সামনে রেখে দলীয় সংগীত, একক সংগীত, নাচ, আবৃত্তি পরিবেশন করছেন সাংস্কৃতিককর্মী ও শিল্পীরা। বিজয় মেলার অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় স্টল মালিকরা বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানান।

পরিবারসহ মেলায় আসা সরকারি চাকরিজীবী ওসমান গনি জানান, ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার নিয়ে বিজয় মেলায় আসলাম। কিন্তু যে পরিমাণ ভীড় ভালো করে দেখতে পারলাম না। সাথে বাচ্চা থাকায় আরও সমস্যায় পড়ে গেছি। প্রবেশ পথ আর বের হওয়ার পথ একই হওয়ায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী জুবাইর উদ্দিন। তিনি বলেন, মেলায় এসে তেমন কিছু কিনতে পারলাম না। মানুষ বেশি হওয়ায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। তবু আসতে পেরে ভালো লাগছে। স্কুলকলেজের অনেকে দলবেঁধে মেলায় এসেছেন।

এদিকে গতকাল আগ্রাবাদ থেকে জিইসি পর্যন্ত যানজট ছিল। লালখান বাজার থেকে কাজির দেউরি সড়কে যানবাহন ঢুকতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। আগ্রাবাদ থেকে যাত্রী নিয়ে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুর রহমান বলেন, এত ভিড়, সামনে পেছনে কোনো দিকেই তো যেতে পারছি না।

বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব আহমেদ নেওয়াজ আজাদীকে বলেন, মেলায় মানুুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল শুক্রবার উপলক্ষে। স্টল মালিকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠুভাবে মেলা সম্পন্ন করার জন্য চেষ্টা অব্যহত রেখেছি। তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে যেখানে বিজয় মেলা শুরু হয়েছিল সেখানে এবারের বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফারুকআজম বীরপ্রতীকের ইচ্ছায় এবারের মেলার আয়োজন। সরকার এ মেলা আয়োজনে আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। এটা সবার মেলা, জনগণের মেলা। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই, চব্বিশে কী হয়েছিল সেই বিষয়গুলো প্রজন্মকে জানানোর জন্য এ মেলার আয়োজন। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান জানান, একটা গেট আগে বন্ধ ছিলো তবে মূল গেটে ভিড়ের বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আরও একটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে নৌ চলাচল স্বাভাবিক
পরবর্তী নিবন্ধনগরে বাড়ছে শীতের অনুভূতি