নগরীর হাজারী গলির স্বর্ণ দোকানির কাছে ২০ লাখ টাকা চেয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে দুদকের কর্মকর্তা মো. কামরুল হুদাকে। গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব কারাগারে পাঠানোর এই আদেশ দেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মো. কামরুল হুদা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে কুমিল্লায় দুদকে কর্মরত আছেন। এর আগে রাঙামাটি ও ঢাকা দুদকে কর্মরত ছিলেন। দুদক ও আদালতসূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লা দুদকে কর্মরত হলেও মো. কামরুল হুদা নগরীর বাকলিয়া এলাকায় বসবাস করেন। প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি বাকলিয়ায় ছুটে আসেন। ফিরতেন শনিবার রাতে। অসদাচরণজনিত কাজকর্ম করতেই মূলত তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি সপ্তাহেই চট্টগ্রামে আসতেন। মূলত ছুটির দিনগুলোকে টার্গেট করতেন মো. কামরুল হুদা। দুদকের অফিসার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। হাজারী গলির স্বর্ণ দোকানির কাছেও তিনি ছুটির দিনে গিয়েছেন। ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ কালো টাকা উপার্জনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাইয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা চেয়েছেন। এ বিষয়ে আপোষ–মীমাংসার জন্যও ছুটির দিনকে তিনি বেছে নিয়েছেন। পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে দোকানি তা উল্লেখ করেছেন। আদালত সূত্র জানায়, হাজারী গলির ঐশী হুলিয়াম নামের স্বর্ণ দোকানের মালিক পরিমল ধর। তিনি দোকানে থাকা অবস্থায় দুদকের কর্মচারী (সহকারী উপপরিদর্শক) মো. কামরুল হুদা নিজেকে অফিসার পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। একপর্যায়ে অভিযোগ রয়েছে এমনটা জানিয়ে এবং অভিযোগ ডিসমিস করবে জানিয়ে তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে তাদের সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচলাইশ থানাধীন হোটেল জামানে তাদের সাক্ষাৎ হয়। আগে থেকে অবগত থাকা থানা পুলিশও একটু পর সেখানে গিয়ে হাজির হয়। একপর্যায়ে সেখান থেকে মো. কামরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পরিমল ধর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে স্বর্ণ দোকানি পরিমল ধর উল্লেখ করেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দোকানে বসা ছিলাম। দুপুরের দিকে মো. কামরুল হুদাসহ কয়েকজন লোক দোকানে আসে। কামরুল নিজেকে দুদকের অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার কাছে চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের নাম ব্যবহার করে খামসহ একটি চিঠি হাতে দেন। যেখানে জনৈক প্রফুল্ল ধর নামক ব্যক্তির স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রে আমার নাম–ঠিকানা উল্লেখ করে আমার বিরুদ্ধে ইয়াবার ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ কালো টাকা উপার্জনের অভিযোগ দেখান। সেখানে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করণের বিষয় উল্লেখ ছিল। আবেদনে আরো অন্যান্য অভিযোগও পয়েন্ট আকারে লেখা ছিল। এক সময় তিনি আমাকে তার ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে দোকান ত্যাগ করেন। এরপর দোকানের সহকারী আমার ভাতিজা বিজয় চৌধুরীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি এবং বিজয় কামরুলকে ফোন দেয়। ফোনে তিনি ভাতিজাকে প্রস্তাব করেন, আমি যদি তাকে ২০ লাখ টাকা দিই তাহলে আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। তার কথা মত আমার ভাতিজা আমাকে বিষয়টি অবহিত করলে আমি কামরুলের খারাপ উদ্দেশ্য বুঝতে পারি এবং তার সাথে কথাবার্তা বলে সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারণ করি। আপোষ–মীমাংসা করার কৌশল নিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার পাঁচলাইশ থানাধীন অলি খাঁ মসজিদের পাশের হোটেল জামানে সাক্ষাৎ করি। এর আগে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। একপর্যায়ে পুলিশ হোটেলে প্রবেশ করে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কামরুল ঘটনাসহ টাকা দাবির বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেন বলেও এজাহারে পরিমল ধর উল্লেখ করেন।