রাজু। নগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি। লকডাউনের কারণে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস চলছে না। তাই বলে রাজুর বাড়ি যাওয়া থেমে থাকেনি। প্রথমে তিনি অক্সিজেন মোড় থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে করে ফটিকছড়ির বিবিরহাট গেছেন। সেখান থেকে সিএনজি টেক্সি করে পৌঁছে গেছেন নিজ গৃহে।
কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বাসিন্দা ফিরোজ। তার বাড়ি যাওয়াও আটকাতে পারেনি লকডাউন। প্রথমে তিনি শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে করে বাঁশখালী উপজেলা হয়ে পেকুয়ার টৈটং যান। সেখান থেকে সিএনজি টেক্সি করে কক্সবাজার সদর পৌঁছান। সেখান থেকে উখিয়া।
রাজু ও ফিরোজের কাছে প্রশ্ন ছিল, এত কষ্ট করে বাড়ি যাওয়ার কী দরকার ছিল? দুজনের উত্তর ছিল প্রায় অভিন্ন। তাদের ভাষায়, মা-বাবা ও ভাই-বোনসহ নিকাত্মীয়দের সবাই থাকেন গ্রামে। কর্মসূত্রে কেবল তারাই থাকেন শহরে। নিকটাত্মীয়দের পাশাপাশি পাড়া-পড়শির সঙ্গে উদযাপন করতে না পারলে ঈদ বলে মনেই হবে না। আনন্দে পূর্ণতা আসবে না। তাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই ছুটে গেছেন বাড়ি। এক্ষেত্রে নিজের করোনার ঝুঁকির পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছেন না তো? এমন প্রশ্নে তারা বলেন, সব আল্লাহর ইচ্ছে। নিকটজনদেরও এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই।
শুধু রাজু বা ফিরোজ নয়, তাদের মতো আরো অনেকেই শহর ছেড়েছেন ঈদ উদযাপন করতে। তাদের চলে যাওয়ায় ধীরে ধীরে খালি হয়েছে শহর। বিপরীতে পূর্ণতা পাচ্ছে গ্রাম। রীতিমতো সেখানে ঈদ উৎসব শুরু হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ও যেন তাদের স্পর্শ করছে না। অথচ সরকার বারবার নিরুৎসাহিত করছে ঈদে যেন কেউ শহর না ছাড়েন। সংক্রমণ এড়াতে এ বছরও যেন স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন না করেন। সংক্রমণ এড়াতে চলছে লকডাউন। বন্ধ আছে দূরপাল্লার পরিবহন। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এরপরও কিন্তু মানুষের ছুটে চলা থেমে নেই। কার-মাইক্রো, ট্রাক-লরি, সিএনজি টেক্সি বা অন্য কোনো যানবাহনে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদ করতে ছুটছেন নিজ নিজ জেলায়। গতকালও শহরের প্রধান চারটি প্রবেশ পথ সিটি গেট, অক্সিজেন মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় ঘরমুুখী মানুষের স্রোত দেখা গেছে। অবশ্য মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বাইরে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও শহর ছাড়তে দেখা গেছে। তারাও ঈদ উপলক্ষে পাওয়া ছুটি ভোগ করতে চান নিজ এলাকায়।
লকডাউনের মধ্যেও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচলের সুবিধা দিয়ে গত ৫ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছিল, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় সুযোগ থাকায় শহর থেকে উপজেলায় গণপরিবহন চলাচল করছে। নগরে বসবাসরত মীরসরাই, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, ফটিছড়িসহ দূরের উপজেলার লোকজনের বাড়ি ফিরতে সমস্যা হচ্ছে না।
ধারণা করা হচ্ছে, নগরে বসবাসরত ১৪ উপজেলার যেসব বাসিন্দা বাস করেন তাদের বেশিরভাগই ঈদ করতে গ্রামে যাবেন। এর সঙ্গে নানাভাবে শহর ছাড়া অন্য জেলার বাসিন্দার সংখ্যা যোগ করলে তা ২০-২২ লাখ হতে পারে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ৬০ লাখ লোকের নগরীর অন্তত অর্ধেক লোক ঈদের সময় শহর ছাড়েন।