মামলা নিষ্পত্তি করতে কত সময় লাগে? পাঁচ বছর? ১০ বছর? ১৫ বছর? চট্টগ্রামের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে থাকা একটি ছিনতাই মামলার বয়স এখন ২৩ পার করে ২৪ বছরে পড়েছে। বর্তমানে মামলাটি রয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। অথচ দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলা নিষ্পত্তির কথা ছিল। লঘু অপরাধের বিচারে কেন এমন দীর্ঘসূত্রতা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মারামারি, চুরি, হুমকি, বাধা দেওয়া, এমনকি ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের বিচার কার্যক্রম বছরের পর বছরেও শেষ না হওয়া দুঃখজনক। বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘ এ বিলম্বের ফলে আসামি কিংবা বাদী দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই অমানবিক।
২০০১ সালের ১০ মে নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। জননিরাপত্তা আইন ২০০০–এর ৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ছিলেন তৎকালীন বিদ্যুৎ বিভাগের চাকরিজীবী খন্দকার শফিকুর রহমান। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি আগের দিন অর্থাৎ ৯ মে দুপুরে জনতা ব্যাংক শেখ মুজিব রোড কর্পোরেট শাখায় যান। সেখান থেকে তিনি নিজ হিসাব থেকে এক লাখ টাকা তুলেন। এরপর একটি বেবি টেক্সি করে বাসায় ফেরার সময় দুজন ছিনতাইকারী তার পিছু নেন। একপর্যায়ে উক্ত দুই ছিনতাইকারী যথাক্রমে আবু তাহের ও জাফর ইকবাল তার গতিরোধ করে উক্ত এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন এবং মুহূর্তেই সটকে পড়েন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে খন্দকার শফিকুর রহমানের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করেছেন। আদালত সূত্র জানায়, এ মামলায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন কোতোয়ালী থানার এসআই মো. এমদাদুল হক। ১০ মে মামলা দায়েরের পর ১৯ মে তিনি দুই ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালতসূত্র আরো জানায়, ছিনতাইয়ের উক্ত মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে দুই আসামির বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারও শুরু হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ সময় মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় বিচার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। দুই আসামির মধ্যে একজন জামিনে আছেন এবং অপরজন জামিনে গিয়ে পলাতক।
আইনজীবীরা বলছেন, জননিরাপত্তা আইন ২০০০ বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমানে এই আইনের প্রয়োগ নেই। এ আইনে কেউ মামলা দায়ের করেন না। কিন্তু আইনটি সচল থাকার সময় দায়ের হওয়া মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো সমস্যা নেই। ২৩ বছর তো আর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল না।
আইনজীবীরা বলেন, দীর্ঘ সময় বিচার সম্পন্ন না হলে সাক্ষীদের পাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে। আর সাক্ষী না পাওয়া গেলে আসামিদের সাজা দেওয়াও সম্ভব হয় না। সাক্ষীদের তলবের চেষ্টা করেও পাওয়া না গেলে আসামিদের খালাস দেওয়ারও প্রসিডিউর রয়েছে।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ সেখান্দার আজাদীকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে জননিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৪০টি। এর মধ্যে ৩৮টি মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত রয়েছে। বাকি দুটি মামলার বিচারকাজ চলছে। দুটি মামলাই সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যন্ত আসতেই মামলার ২৩ বছর পার কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে সচল থাকা জননিরাপত্তা আইনের মামলা দুটিও উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত ছিল। জননিরাপত্তা আইন বাতিল হওয়ার পর আসামি পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মামলা স্থগিত করে। সম্প্রতি স্থগিতাদেশ উঠে গেলে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৬ মাস তথা ১৮০ দিনের মধ্যে ছিনতাই মামলা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি জাহাঙ্গীর আলম আজাদীকে জানান, তিনি বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন না। তাই ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।
সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এত দীর্ঘ সময় মামলা পেন্ডিং থাকা আসলেই দুঃখজনক। তবে অনেক সময় দেখা যায়, সাক্ষীকে তামিল করা হয় না বা সাক্ষীদের পাওয়া যায় না কিংবা সাক্ষীরা হাজির হয় না। এজন্য মামলা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। তবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দিকে গেলে সাক্ষী নিয়ে সমস্যা হয় না। তিনি বলেন, আরো নানা সমস্যা থাকতে পারে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।